ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অভয়ারণ্যেই হরিণের ভয়

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২০  

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালীর হাতিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চল নিঝুম দ্বীপ। রহস্যময় এ নিঝুম দ্বীপ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বহিঃবিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদেরও ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ দ্বীপের সবুজ-শ্যামল মনোরম পরিবেশ। এখানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ।

১৯৮৫ সালে নিঝুম দ্বীপে দুই জোড়া হরিণ অবমুক্ত করা হয়। সেই সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে নিঝুম দ্বীপ সফরে গিয়ে একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার, যা পরবর্তীতে বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়ায়। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। কিন্তু এখন সেসবই ইতিহাস। বন উজাড় হওয়ায় এ দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৮-১০ হাজারে নেমে এসেছে। 

মূলত গাছ কেটে বসতি গড়ায় আবাসস্থল হারাচ্ছে হরিণ। এখানে রাত-বিরাতে শিকারীরা হরিণ শিকার করে পাচার করছে। এছাড়াও শিয়াল-কুকুরের আক্রমণে হরিণের প্রাণহানি ঘটছে অহরহ। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় নোনা পানি বনে ঢুকে হরিণের খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক সময় প্রাণ বাঁচাতে হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। আবার খাদ্য ও আবাস সংকটে হরিণ নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্য দ্বীপগুলোতে চলে যাচ্ছে। 

নোয়াখালীর হাতিয়ার ৮১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত যে দ্বীপ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে মায়ের মতো আগলে রাখে, সে দ্বীপের সবুজ বেষ্টনী এখন অস্তিত্ব সংকটে। পঞ্চাশের দশকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা অপরূপ সৌন্দর্যের নিঝুম দ্বীপ এখন অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে। পুরো এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে বনের গাছ কাটার মহোৎসব। দ্বীপের গাছ ও হরিণ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কমছে পর্যটক। হরিণ না দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের। 

নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মাটিতে কেওড়া গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও কৌশলে কেওড়া গাছের নিচে শ্বাসমূল কেটে ফেলে রাখা হয়েছে, যাতে করে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়। লবণাক্ততার কারণে নিঝুম দ্বীপে শুধু কেওড়া গাছ হয়। আর এ গাছের দাম খুবই কম। তাই গাছ বিক্রির দিকে কারো মনোযোগ নেই। সবার নজর গাছ কেটে সেখানে বসতি গড়ে তোলায়। 

এক সময় যেখানে বন বিভাগের মাধ্যমে সাড়ে ১২ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বাগান করা হয়েছিল, সেটি কমতে কমতে সাড়ে তিন হাজার একরে নেমে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে চিত্রা হরিণের খাবার কেওড়াগাছের পাতা। বনের গাছ কাটতে কাটতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে হরিণের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। 

উপকূলীয় বন বিভাগ জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম চৌধুরী জানান, বন বিভাগের জমি দখল করে নিঝুম দ্বীপে পাঁচ হাজার পরিবারের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বন বিভাগের জমির ওপর অবৈধভাবে বসবাস করছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। 

তিনি আরো জানান, সেখানে বন বিভাগের নিজস্ব জনবল অত্যন্ত কম। স্বল্প জনবল নিয়ে আমাদের লোকজন বেশ কয়েকবার বন বিভাগের জমি ফিরে পেতে উচ্ছেদে বের হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয়রা উল্টো একজোট হয়ে তাদেরকে আক্রমণ করতে আসে।

নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, নিঝুম দ্বীপে সীমানা প্রাচীর না থাকা, খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ হাজার হরিণ থেকে কমে ৮-১০ হাজারে নেমে এসেছে। অনেক সময় হরিণ পাচার হয়। তাছাড়া প্রতিটি ছোট বা মাঝারি হরিণের মূল্য ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলে টাকার লোভে অনেক বাসিন্দা হরিণ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। হরিণ কমে যাওয়ায় পর্যটকও কমে গেছে।

উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, মানুষ বন উজাড় করছে। এতে হরিণ বিচরণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে হরিণ পার্শ্ববর্তী বনে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগের বিট অফিসারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া আছে।