ব্রেকিং:
নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই অবশেষে ন্যাটোর সদস্যপদ পেলো সুইডেন বাজারে নেই নতুন দামের সয়াবিন তেল, দাম বেড়েছে সবকিছুর ভারতে পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৮ কার্গো জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৩ চলছে কর্মযজ্ঞ, অক্টোবরে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন রাষ্ট্রপতি গার্ডেন থিয়েটার কুমিল্লার একক নাট্য প্রদর্শনী ১০ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ ইঞ্জিন বিকল, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ রোজায় কমলো অফিসের সময়সূচি গাড়ি তৈরি করবে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ: শিল্পমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত বাংলাদেশ ও সৌদি আরব
  • মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

অভিমানে জঙ্গলে ১৭ বছর

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ না পেয়ে ১৭ বছর আগে জঙ্গলে বসবাস করতে শুরু করেন মুজিবুর। সৎ ভাইদের ওপর অভিমান নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি। জঙ্গলে পলিথিন দিয়ে বানানো খুপরি ঘরে বসবাস করতেন মুজিবুর। কখনো অনাহারে, কখনো অর্ধহারে দিন কেটেছে তাঁর। কিন্তু লোকালয়ে তাকে দেখা যায়নি। এখন তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। এক চোখে সমস্যা নিয়ে ভোগা মুজিবুর ভিটেবাড়ি না থাকায় বিয়েও করেননি। মুজিবুর গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ার মৌলভীবাড়ির মৃত লাল মিয়ার ছেলে। জঙ্গলে খুপরি ঘরে ১৭ বছর ধরে বসবাস করছেন -এমন খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সোমবার (২৯ মে) দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের নির্দেশনায় দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা মাশিকাড়া  গ্রামের উত্তরপাড়ার মৌলভীবাড়ির জঙ্গলে মুজিবের খুপরি ঘরে যান। ইউএনও নিগার সুলতানা তার শারীরিক খোঁজখবর নেন। মুজিবুর অসুস্থ হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সেই জঙ্গলে গিয়ে দেখা গেছে, পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপরিতে বসে আছেন মুজিবুর। ইউএনও আসার খবর পেয়ে খুপরি ঘর থেকে নিচু হয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর শোনান জীবনের গল্প । গল্পের শুরুতে মুজিবুর আবেগে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। এরপর বলতে থাকেন এক এক করে জীবনের গল্প ‘আমার আব্বা রেলওয়েতে চাকরি করত। আব্বার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমার মাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমাদের সুখের সংসার ছিল। পরের সংসারে আমিই একমাত্র ছেলে। এরপর বাবাও মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কখনোই তাদের সৎ ভাই ভাবতাম না। আমি তাদের পড়াশোনা করিয়েছি। আজ তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আজ ১৭ বছর এ ঝোপজঙ্গলে বাঁশঝাড়ে ঘেরা পলিথিনের খুপরি ঘরে বসবাস করছি, কেউ আমার খোঁজ নিতে আসেনি। আমার পিতার সম্পদ থেকে তারা আমাকে বঞ্চিত করেছে। এ সময় তিনি খুপরি ঘরে থাকা পুরাতন কিছু দলিলপত্র দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ জঙ্গলে সাপ, বিচ্চু, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী বসবাস করে। তারা হিংস্র হলেও কোনোদিন আমার ক্ষতি করেনি, মানুষ যতটা আমার ক্ষতি করেছে। তাই রাগ ক্ষোভে মানুষ থেকে দূরে এসে এই হিংস্র প্রাণীদের সঙ্গে বসবাস করছি। সহায় সম্বল নেই, থাকার ঘর নেই, তাই বিয়েও করতে পারিনি।

অভিমানে জঙ্গলে ১৭ বছর

 মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে আমি মুজিবুর রহমান। সৎ ভাই ফরিদুল পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। আমি কাঁচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে জহিরুলকে বিএ পাস করাই। সেই ভাই-ই পৈতিৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই। এসময় তিনি জেলা প্রশাসক  থেকে সহযোগিতা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে গ্রামের স্থানীয়রা বলছে ভিন্ন কথা। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, মুজিবুর দরবেশ প্রকৃতির মানুষ। সে বিভিন্ন ওরস ও মাজারে দিন কাটাত। সেই বিভিন্ন লোকজন নিয়ে বাড়িতে মাদক সেবনের আড্ডা জমাত, যার কারণে ভাইয়েরা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলেন, কিন্তু বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেননি। মুজিবুরই রাগে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বের হওয়ার কয়েক বছর পর দেখি  সে পাশ্ববর্তী জঙ্গলে খুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। যে জায়গায় সে বসবাস করছে সে জায়গাটাও তার।


মুজিবুরের চাচি সুফিয়া বেগম বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি এখনো ভাগবাটোয়ারা হয়নি। তার সম্পদ যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে, সে নেশা ছেড়ে ভালো হয়ে বাড়ি ফিরলে তাকে সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। মুজিবুরের ভাতিজা আল আমিন বলেন, ‘চাচায় বিভিন্ন মেয়ে ছেলে নিয়ে বাড়িতে মাদকের আড্ডা বসাতেন। আমাদের ধার্মিক পরিবার, সে কারণে তাকে এসব ছাড়ার জন্য প্রায় বলা হতো কিন্তু তিনি এসব শুনতেন না, যার কারণে তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে কিন্তু বের করে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে তার খোঁজ খবর নিতে এসেছি।  তিনি অসুস্থ থাকায় তাকে তাৎক্ষনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া তাকে ঘর তোলার জন্য টিন বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে মুজিবুরকে দেখতে গিয়েছি। তার চোখে সমস্যা তার চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ দিয়েছি। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ থেকে তাকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হবে।