ব্রেকিং:
শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে ছবি তোলা প্রথম আলোর গর্হিত অপরাধ : বিজ্ঞ মহল এক বছরে বাংলাদেশী পোশাক আমদানি বেড়েছে ৫২% স্বল্পোন্নত থেকে টেকসইয়ে উত্তরণে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ইইউ নির্বাচনী ট্রেনে ইসির যাত্রা খুলনা-মোংলা রেলপথ - সুবর্ণভূমির হাতছানি গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল না দিলে সরকারি-বেসরকারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সরকারি হাসপাতালে চালু হলো বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ভিয়েতনামের সঙ্গে আরও জোরালো সম্পর্ক চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সক্রিয় হচ্ছেন নির্বাচনী কূটনীতিতে মুখ দেখে নয় মনোনয়ন মিলবে জনপ্রিয়তায় চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা কুমিল্লায় ফেনসিডিল-গাঁজাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক লক্ষ্মীপুরে ৫০ অসহায় পরিবার পেল ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী রোগীর শরীরে ভুল রক্ত ট্রান্সফিউশনের অভিযোগ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যত্রতত্র পশু জবাই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভিপি শাহ আলমের দাফন চাঁদপুরে জাতীয় শিক্ষাক্রমের উপর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রশিক্ষণ শাহরাস্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করায় প্রতিবাদ সমাবেশ চলতি মৌসুমে চাঁদপুরে সরবরাহ বেড়েছে দক্ষিনাঞ্চলের তরমুজ
  • শনিবার   ০১ এপ্রিল ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৮ ১৪২৯

  • || ০৯ রমজান ১৪৪৪

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন কুমিল্লার শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩  

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক আগেই গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়ার সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য এবার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘মরোণত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ পাচ্ছেন তিনি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে অনেক আগেই বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রণীত এক গেজেটে খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়াকে বীর উত্তম উপাধি দেয়। সেই তালিকায় তার স্মারক নম্বর ১৪। এই হিসেবে তিনিই মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ বেসামরিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়া তিনিই একমাত্র বেসামরিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ‘মরণোত্তর বীর উত্তম’ উপাধি পেয়েছিলেন।

জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এই পুরস্কারে ভষিত হতে যাচ্ছেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খাজা নিজাম উদ্দিন ভূইঁয়া সেই গৌরবময় স্বীকৃতি পাবেন। গত বৃহস্পতিবার এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মালাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল লতিফ ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম তাবেন্দা আক্তার। ছয় ভাই এবং তিন বোনের মধ্যে নিজাম ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তিনি কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায়
নিজামউদ্দিন ভূঁইয়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ব দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পন্ন হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ভালো কবিতা লিখতেন, ভালো গানও করতেন। সেই সঙ্গে গিটার বাদনেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশুদ্ধভাবে গাইতে পারার কারণে তার বেশ পরিচিতি ছিল। ছাত্রজীবনে ‘কালচক্র’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন তিনি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নিজামউদ্দিন খেলাধুলায়ও ছিলেন সমান পারদর্শী। ১৯৬৪ সালে নিজামউদ্দিন চট্টগ্রামের জেএম সেনস ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি, ১৯৬৬ সালে এইচএসসি, ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক পাস এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেন।

এরপর ১৯৭১ সালে পড়াশুনা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-তে। মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এমবিএ) পড়াশোনা শেষ করে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস পদে কমর্রত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে পালিয়ে নিজ এলাকা হয়ে ভারত যান।

ভারতে অস্ত্র বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া সিলেটের কানাইঘাট, মস্তানগঞ্জ, ভরামইদ, নক্তিপাড়া ও মণিপুর বাজারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল-মে মাসের প্রথম ১০ দিন প্রশিক্ষণ নেন বিএসএফের কাছে এবং পরের এক মাস ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সিলেট
অঞ্চলের ৪ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর জালালপুরের যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘সাব- সেক্টর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে তিনি সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বে ছিলেন ৪৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনে তিনি এতই চৌকস ছিলেন যে লোকজন তাকে সামরিক বাহিনীর কোন অফিসার মনে করত। তাকে সবাই ক্যাপ্টেন নিজাম হিসেবে-ই চিনত।

নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া তার দল নিয়ে সিলেট জেলার কানাইঘাটের আটগ্রাম সড়কের বাজারের কাছে একটি সেতু বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করেন। সে সময় একদল পাকিস্তানি সেনা সেতুর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছিল। তারা নিজামউদ্দীনের দলকে আক্রমণ করে। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে তিনি ও তার দলের মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করতে থাকেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে খাজা নিজামউদ্দীন শহীদ এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যুদ্ধ শেষে দলের অন্য মুক্তিযোদ্ধারা খাজা

নিজামউদ্দীনের মৃতদেহ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ খাজা নিজামউদ্দীন ভূঁইয়াকে সিলেটের মুকামটিলায় সমাহিত করেন। পুরো যুদ্ধটি একটানা ছয় ঘণ্টা যাবত চলে। পুরো সময়টাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিজামউদ্দিন। এক দিকে যেমন অস্ত্র পরিচালনা করছিলেন অন্য দিকে অন্যান্য
সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন নির্দেশনাও দিচ্ছিলেন।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রণীত এক গেজেটে খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়াকে বীর উত্তম উপাধি দেয়। সেটির প্রায় ৫০ বছর পর এবার এ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া পাচ্ছেন এমন স্বীকৃতি।