ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দুর্গম চরের অদম্য সাহসী নারী ফুলেআরা ইমাম

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১  

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের নদী বেষ্টিত নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন। প্রমত্তা যমুুনার ভাঙনে জীবন যেখানে মিশে গেছে কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে, আর এমনি কিছু নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে কেউ বা হারিয়েছেন প্রিয়জন কেউবা আবার বসতভিটা।

এমন একটা সময় ছিলো যখন অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবা এখানে ছিল না বললেই চলে, আর এই কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন হাজারো মানুষ। বিনা চিকিৎসায় মৃত এসব মানুষের স্বজনেরা অনেকে স্বপ্ন দেখেছেন উন্নত চিকিৎসার, কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ করবে কে? কিন্তু সবার দেখা স্বপ্ন পূরণ করলেন ফুলেআরা ইমাম। সময়টা ১৯৮২ সাল প্রায় চার দশক আগের কথা, কোনো এক রাতে কলেরা নামক ভয়াবহ রোগটা তখন চরের মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়।

চিকিৎসার অভাবে মরতে থাকে শিশুরা। স্থানীয় কিছু হাতুড়ে ডাক্তার আর কবিরাজরা সেদিন ছিল নীরব, উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধের অভাব তাদের করে দিয়েছিল বাকরুদ্ধ। মানুষের মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না তাদের। সেই রোগে ফূলোআরা ইমাম তার ছোট ভাই সুজনকেও হারান।

ভাই হারানোর ব্যথায় ফুলেআরার বুকে জেগে ওঠে হাসপাতাল নির্মাণের স্বপ্ন। কিন্তু এ যেন এক রূপকথার দুঃসাধ্য চাওয়া। ভাই হারানোর ১ বছরের মাথায় ফুলেআরার বিয়ে হয় স্থানীয় ডা. ইমাম হোসেনের সঙ্গে, বিয়ের রাতেই ফুলেআরা স্বামীকে বলেন তার স্বপ্নের কথা। মানুষের প্রতি স্ত্রীর অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে স্বামীও স্বপ্নের সারথী হলেন। গৃহিণী ফুলেআরা সংসার খরচ বাঁচিয়ে একটু একটু করে জমাতে থাকেন টাকা। প্রায় ১৫ বছরের সঞ্চিত ১ লাখ টাকা তুলে দেন স্বামীর হাতে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য।

স্ত্রীর জমানো ১ লাখ টাকা আর ইমাম হোসেন আরো কিছু যোগ করে ২০০৫ সালে নির্মাণ করলেন টিনশেড ঘর। এই ঘরেতেই শুরু হলো ফুলেআরার মানবসেবা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। উপকৃত হতে থাকলো চরের হাজারো মানুষ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৭ সালের মাথায় সর্বনাশী যমুনার থাবা থেকে শেষ রক্ষা হলো না মানবসেবা হাসপাতালের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ভাগ্যের দোহাই না দিয়ে ফুলেআরা ইমাম দম্পতি আবারো ২০০৯ সালে নতুন করে নির্মাণ করলেন হাসপাতাল, শুরু হলো চিকিৎসা সেবা।

শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফুলেআরা ইমাম মানবসেবা হাসপাতালে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন হাজারো মানুষ। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি পারে মানুষকে স্বপ্ন পূরণের উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে, ফুলেআরা ইমাম তার জ্বলন্ত উদাহরণ। একজন নারী হয়েও থেমে থাকেনি। নিজের দেখা স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে চরের মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন তার স্বপ্নের ‘আমেনা দৌলতজামান মানবসেবা হাসপাতাল’। তার এই অদম্য সাহসিকতার স্বীকৃত স্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরষ্কার ও সম্মাননা।

ফুলেআরা ইমাম বলেন, আমার এই স্বপ্ন পূরণের পুরোটা সময় জুড়ে যিনি পাশে ছিলেন তিনি আমার স্বামী ডা.ইমাম হোসেন। এমন একজন বন্ধুর মতো স্বামীর জন্যই আমার হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি চাই এই হাসপাতালের মাধ্যমে মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাক।

ফুলেআরা ইমাম বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন নিয়মিত, পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষরোপণসহ, নারী কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চরের বুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘হোটেল আরশী নগর’ নির্মাণের উদ্যেগ নিয়েছে।