ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোক্তাকে যে অধিকার দিয়েছে ইসলাম

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২  

ভোক্তার প্রাপ্য সামগ্রি মূলত মুষ্টিমেয় উদ্যোক্তা ও বিক্রেতার হাত হয়ে ভোক্তা তথা মানুষের মাঝে বিতরণ হয়। মানুষের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছানোর মাধ্যম তারা। তাই এ সেবা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও মর্যাদাপূর্ণ। একজন ব্যবসায়ীর মর্যাদার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি : ১২০৯)।

উৎপাদন করার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি তোমাদের ভূমি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে বসবাস উপযুক্ততা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সুরা হুদ : ৬১)। এই বসবাস উপযুক্ততার অর্থ হলো, উৎপাদন ও মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা। তা ছাড়া অনেক আয়াত ও হাদিসে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও এর জন্য শ্রম দেওয়াকে প্রশংসা করা হয়েছে।

ভোক্তার পরিচয়

ভোক্তা বলা হয়, যিনি তার নিজের পছন্দ বা প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বা সেবা ক্রয় করেন এবং তা নিঃশেষ করেন। সুতরাং ভোক্তা মূলত তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পণ্য বা পরিসেবা ক্রয় করেন; উৎপাদন বা পুনরায় বিক্রয়ের জন্য নয়। ভোক্তা হলো, বিক্রয়চক্রের বা চেইনের শেষ ব্যবহারকারী। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো পর্যায়ের ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতাকে ভোক্তা বলা হয়। তিনি সর্বশেষ ব্যবহারকারী হওয়া বা না হওয়া এখানে বিবেচ্য নয়।

একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভোক্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, ভোক্তার চাহিদা ছাড়া উৎপাদকদের উৎপাদনের প্রয়োজন বা প্রেরণা থাকে না। ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা এবং সম্পদ বণ্টনে অসমতা সৃষ্টি হবে।

ভোক্তার অধিকার

পাশাপাশি আইন ও নিয়মকানুন দ্বারা বিক্রেতার আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কারণ, এ শ্রেণির কোনো অনিয়ম বা অনৈতিকতার ফলে ভোক্তা শ্রেণি তথা মানব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভোক্তা তার ন্যায্যটা পাওয়ার অধিকার রাখে। তাদের এ অধিকারকে বলা হয় ‘ভোক্তাদের অধিকার’।

কনজিউমার রাইটস বা ভোক্তা অধিকার একটি মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার। তাদের এ অধিকার সম্পর্কে সর্বপ্রথম সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত আইন দিয়েছে ইসলাম। যা ফিকহের গ্রন্থাবলিতে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। ইসলামে অধিকার বাস্তবায়নের স্বতন্ত্র নীতি রয়েছে। যে নীতিতে ইসলাম অনন্য ও অতুলনীয়। এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করে দেশীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নিয়ে পর্যালোচনা করা হলো। একই সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ইসলামের অনন্যতার কিছু দিক তুলে ধরা হলো-

ইসলামে অধিকারনীতি

ইসলাম সবসময় ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর যে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র কৌশল রয়েছে, তার কয়েকটি দিক হলো-

এক. ইসলাম অধিকার প্রতিষ্ঠার আগে মানবতার চেতনাকে জাগ্রত করে। হাদিসে এসেছে, ‘সব মোমিন এক দেহের মতো। যার কোনো অঙ্গ ব্যথিত হলে পুরো দেহ তার জন্য রাত জাগে এবং জ্বরাক্রান্ত হয়।’ (আল মুজামুল কাবির, তাবারানি : ৫২)।

দুই. প্রতিটি বিবেককে একজন শাসকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। অর্থাৎ তাকওয়ার শিক্ষা ও আল্লাহভীতি অন্তরে জাগ্রত করে। কারণ মানুষ সব ধরনের আইন ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু নিজের বিবেককে ফাঁকি দিতে পারে না। সেখানে আল্লাহর উপস্থিতি-চেতনা তাকে নীতিবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে বাধ্য করে। এর চমৎকার উদাহরণ হলো, ওমর (রা.)-এর যুগে একজন নারীর প্রসিদ্ধ ঘটনা। তিনি শেষ রাতে দুধ দোহনের পর বাজারে নেওয়ার আগে মেয়েকে তাতে পানি মেশাতে বললেন। মেয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলল। মা বললেন, ‘এ সময় তো প্রশাসন এখানে নেই।’ মেয়ে প্রতিত্তোরে বলল, ‘আল্লাহ তো এখানে আছেন। তিনি দেখছেন।’ ভেজালমুক্ত খাদ্য পরিবেশনের এটি অনন্য নজির।

তিন. অন্যের অধিকার যথাযথভাবে প্রদানের দায়বদ্ধতা। নিজের অধিকার ছাড় দিয়ে হলেও অন্যের অধিকার যথাযথ দেওয়ার যে শিক্ষা ইসলাম প্রদান করে, তার নজির কোথাও নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে প্রদান করো।’ (বোখারি : ১৯৬৮)। যার ফলে মুসলিম সমাজে নিজের চেয়ে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সবাই সচেতন থাকে এবং সবার ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।

ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নে বর্তমান সমাজ

অপরদিকে আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে সবাই নিজের অধিকার আগে চায়। নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করা হয়। অন্যের অধিকারের প্রতি গুরুত্বটা সেভাবে দেওয়া হয় না। ফলশ্রুতিতে স্বার্থপর ও অসহিষ্ণু এক জাতির বিশ্রী চেহারা সমাজে দেখতে হচ্ছে। একই চিত্র ভোক্তা অধিকার নিয়েও। পদে পদে ভোক্তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সঠিকভাবে মূল্য পরিশোধ করার পরও তাকে সঠিক পণ্য, সঠিক সেবা দেওয়া হয় না।

ইসলামে ভোক্তা অধিকার

ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। মানুষে মানুষে শ্রেণিবৈষম্য নেই। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। ইসলাম সাম্যের মিছিলে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। নামাজের সারিতে সব শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাণের ধর্ম ইসলামে অধিকারের বিভাজন নেই। রাজা-প্রজা সমান। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি সাধারণ মানুষের অধিকারকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। দেশের নাগরিকদের সুখ ও শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইসলাম শাশ্বত সুন্দর বিধান দিয়েছে।

ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতারণা নিষিদ্ধ

প্রতিটি শহরের বাজারে বাজার কমিটি আছে। বাজার কমিটির উচিত বাজার তদারকি করা। নির্বিঘ্ন বাজারব্যবস্থা উপহার দেওয়া। পণ্যের কোনো ত্রুটি থাকলে ক্রেতাকে অবগত করা আবশ্যক। ত্রুটিযুক্ত পণ্যকে সামনে প্রদর্শন করতে হবে। দোষ-ত্রুটি গোপন রেখে কোনোভাবেই ক্রেতাকে ঠকানো যাবে না।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) একবার একটি খাদ্যদ্রব্যের স্তূপের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাতে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁর হাতে আর্দ্রতা অনুভব হলে বলেন, হে খাদ্য বেপারী, এ কী? সে বলল, আল্লাহর রাসুল, এতে বৃষ্টির পানি লেগেছিল। তিনি বলেন, সব খাদ্যের ওপর তা রাখলে না কেন? তাহলে লোকে তা দেখতে পেত। অতঃপর তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২২৪)

পণ্যের সঠিক তথ্য জানানো

পণ্য সম্পর্কিত সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ভোক্তাকে অবগত করতে হবে। পণ্যের ত্রুটি গোপন রাখা অপরাধ। অনলাইনে পণ্য বিক্রির সময় আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। যথাযথ গুণাগুণ ও দোষ বর্ণনা করতে হবে। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘মুসলমান ভাই ভাই। কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইকে না জানিয়ে তার কাছে ত্রুটিযুক্ত কোনো কিছু বিক্রি করবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

ওজনে কম দেওয়া যাবে না

ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করেছেন। স্পষ্ট ভাষায় অধিকারের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং ভোক্তা অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বরোপ প্রদান করতে হবে। ভোক্তার মৌলিক চাহিদা পূরণ যেমন—খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার প্রতি নজর দিতে হবে। ভোক্তাকে ঠকানো যাবে না। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া যাবে না। ভোক্তাকে পরিমাপে কম দেওয়া অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ন্যায্য ওজন প্রতিষ্ঠা করো। এবং ওজনে কম দিয়ো না।’ (সুরা : রহমান, আয়াত : ০৯)

মাপে কম প্রদানকারী আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। এমন মানুষ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মাপে পূর্ণমাত্রায় দেবে, যারা মাপে কম দেয় তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। এবং মানুষকে তাদের বস্তু কম দিয়ো না।’ ( সুরা : শুআরা, আয়াত : ১৮১-১৮৩)

পণ্য সরবরাহকারী লাভবান হয়

কল্যাণ প্রার্থনায় সওয়াব আছে। মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ইসলামের শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানুষের জন্য উত্তম পণ্যের ব্যবস্থাপনাকারী আল্লাহর রহমতে থাকবে। নির্ভেজাল ও উপকারী পণ্য আমদানিকারীর রিজিকপ্রাপ্ত হয়। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমদানি পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় এবং মজুদদার অভিশপ্ত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৩)

মজুদদারি মহাপাপ

ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে যেসব পথ-পদ্ধতি মানুষের জন্য ক্ষতিকর ইসলাম তা নিষিদ্ধ করেছে। পণ্যের চাহিদা ও বাজার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে। কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে অধিক লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে বহু দিন ধরে পণ্য মজুদ করে। ফলে বাজারে পণ্যাভাব দেখা দেয়। চড়া মূল্য উঠে পণ্যের দাম। ভোক্তারা অসুবিধা ও কষ্টে পড়ে। ইসলাম পণ্য মজুদদারিকে অভিশপ্ত করেছে। তাকে পাপিষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছে। হাদিসে এসেছে, ‘পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মজুদদারি করে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬০৫, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২৬৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের (সমাজে) খাদ্যদ্রব্য মজুদদারি করে, আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগ ও দরিদ্রতার কশাঘাতে শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৫)

ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদকরণ রোধ করার পদ্ধতি হিসেবে রাষ্ট্রকর্তৃক ব্যবস্থা নিতে পারে। মজুদকারীর ওপর শাস্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রের জন্য ভবিষ্যৎ বিপদ মোকাবেলা ও জনকল্যাণার্থে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি গুদামজাত করা বৈধ।