ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং মামলার রায়

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২  

দেশে তখন সরকার ও বিরোধী দলের চরম পাল্টাপাল্টি চলছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি পাকিস্তানের সমর্থক এবং তাদের আদর্শের অনুসারী দল এবং সেই সাথে কিছু জঙ্গি সংগঠন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তিরা সরকার এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত। এই নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সরকার এবং সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং দেশের সর্বস্তরে ক্রমাগতভাবে সংগঠিত হতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিবৃদ্ধি শাসকশ্রেণির জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এই শক্তিকে নির্মূল করতে না পারলে বিপদ অবধারিত। একাত্তরের চেতনার মশাল থেকে বিচ্ছুরিত আলোয় বিনাশ ঘটবে সব কীট-পতঙ্গদের। এটা হতে দেয়া যায় না কোনোভাবেই। এমন সময় ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা।

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে যখন ব্যাপক জনসমাগম– অতর্কিতে সেখানে মুর্হুমুর্হু গ্রেনেডের বিস্ফোরণ। কিছু বুঝে উঠার আগেই সমাবেশস্থলে লাশ আর লাশ। আবার অনেকেরই কারও হাত আবার কারও পা উড়ে গেছে। ছটফট করছেন ব্যথা আর মৃত্যু যন্ত্রণায়। যারা বেঁচে আছেন কেউ জীবন নিয়ে পালাচ্ছেন আবার এদের অনেকেই নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ছুটে গেছেন মানবতার সেবায়, দ্রুত আহতদের টেনে নিয়ে চিকিৎসা দিতে। নেতৃস্থানীয়দের অনেকেই তৎক্ষণাৎ মানবঢাল তৈরি করে ঘিরে রাখলেন তাদের নেত্রীকে, যিনি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মুক্তি, শান্তি আর সোনার বাংলার প্রতিচ্ছবি, যার বিনাশে নবজাগরণ ঘটে কীট-পতঙ্গদের। বিনাশী সেই উন্মত্ততা থেকে সেদিন রেহাই ঘটেছিল ঐশ্বরিক কৃপায়। তৎকালীন সরকার বাহাদুরের মাথায় হাত। সারা দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন এটা নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ বিক্ষোভ, সেই অবস্থায় অনেকদিন ধরে তিল তিল করে চর্চিত নাটকের যথাযথ মঞ্চায়ন না হওয়ার খড়গ গিয়ে পড়ল গ্রাম্য অভাবতাড়িত সেই ব্যক্তির ঘাড়ে, যার নাম জজ মিয়া।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের পর এটিকেই সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ, যেখানে দিনের আলোতে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের ছত্রছায়ায় পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে সুপরিকল্পিত উপায়ে ঘটানো হয় নৃসংশ এই ঘটনা। দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটেছে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে আরেকটি কলঙ্ক মোচনের দিন হিসেবে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলবের ভূমিকায় থাকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীনসহ ১৯ জনের প্রাণদণ্ডের রায় এসেছে। তৎকালীন সরকারের নেপথ্য চালক এবং হাওয়া ভবনে বসে সরকার ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা তারেক রহমান এবং সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই মামলার মোট আসামি ছিল ৫২ জন। এদের মধ্যে অন্য মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কর্যকর হওয়াতে আসামির সংখ্যা ৪৯। 

মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছে ৩৮ জন। বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর আগে যখন ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয় তখন ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ আরও অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরলে আদালতের সম্মতি পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গভীরভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সুন্দরভাবে এই ঘটনার নেপথ্যের চালকদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। ২০১১ সালে সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ৩০ জনের সবাই এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে বাবর, পিন্টু, তারেক, হারিছসহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজার মত রায় এসেছে। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এই মামলা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। যদি এমনটা না করা হতো তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি এই মামলা থেকে ছিটকে পড়ত এবং আইনের শাসনেও ছেদ পড়ত।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটনার মূল পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার পর তৎকালীন সরকার যখন এর বিচার নিয়ে চাপের সম্মুখীন হয়, পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৈরি হয় আরেকটি নাটকের, যার মূল চরিত্র জজ মিয়া। জানা যায়, সরকারের উপর মহলের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক কোনো ব্যক্তিকে এই মামলায় গ্রেফতার করে দায়সারাভাবে একটি বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। এমতাবস্থায় নোয়াখালীতে নিজ গ্রামে অবস্থানকারী জজ মিয়াকে ধরে আনা হয়। পুরো ঘটনায় নিজের দায় স্বীকারের জন্য চাপ দিয়ে আশ্বস্ত করা হয় পরবর্তীতে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এবং সেই সাথে গ্রামে তার সংসার চালানোর জন্য নিয়মিত মাসোহারার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় এর ব্যত্যয় হলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হবে তাকে। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে ভাগ্যের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে সব কিছু মেনে নেয়। 

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে পুরো ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। বেঁকে বসেন জজ মিয়া। ফাঁস করে দেন আসল ঘটনা। নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। সে সময় তদন্তে হুজি নেতা মুফতি হান্নান এবং তার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে আদালতের সম্মতিতে সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ এর দায়িত্ব পান। অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে কিভাবে তৎকালীন সরকার এই নৃসংশ ঘটনা ঘটাতে ক্ষমতার কেন্দ্রকে ব্যবহার করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় সকলের কাছেই খটকা লাগতে থাকে যে কেবলমাত্র মুফতি হান্নানসহ তার সংগঠনকে আড়াল করাই তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং মূল উদ্দেশ্য ছিল আসল হোতাদের আড়াল করা।

তৎকালীন সরকার দেশি বিদেশি চাপের মুখে দায়সারাভাবে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে, যার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হামলা একটি বিদেশি চক্রান্তের ফসল। এরপর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার সাথে ভারতের সম্পৃক্ততার কথা প্রচার করে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্কের ফাটল ধরানোর পাঁয়তারা করা হয়। এ ধরণের কোনো কিছুতেই যখন কোন সুবিধা হচ্ছিল না, তারা এটাও বলতে ছাড়ল না যে আওয়ামী লীগ নিজেরাই এই ঘটনা ঘটিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ফায়দা নিতে চাইছে। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এই কথা পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করেননি যে শেখ হাসিনা নিজেই তার ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড বহন করে তার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

সবশেষে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার এই রায় আমাদের দেশ এবং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের শাসনের পথে এক উজ্জ্বল পথনির্দেশক হয়ে থাকুক সবসময় এটাই প্রত্যাশা করি।