ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে সেনবাগ স্টেডিয়াম, ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৩  

তদারকির অভাবে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়ামটি। যে মাঠে খেলোয়াড়দের খেলার কথা সেখানে এখন শুধু ঘাস আর ঘাস। বেহাল দশা চোখে পড়ে স্টেডিয়ামটির ভেতর ও বাইরের প্রতিটি অংশে। ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় বোঝার উপায় নেই এটি একটি স্টেডিয়াম। 

জানা গেছে, ২০০৪ সালে ১০ দশমিক ৩০ একর জমির ওপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় ‘সেনবাগ স্টেডিয়াম’। পরবর্তী সময়ে যার নামকরণ করা হয় ‘বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়াম’। ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়। 

২০০৭ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এ স্টেডিয়ামে দুটি বড় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ও ২০১২ বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট রয়েছে। দুটি টুর্নামেন্টের মাঝে শীতকালীন ও স্কুল পর্যায়ের কয়েকটি খেলা হয়েছিল এখানে। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে স্টেডিয়ামটিতে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা। খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেডিয়ামের ভেতরের চারপাশ বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দুটি দর্শক গ্যালারি, যেখানে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার। একই অবস্থা কমেন্টিবক্স ও অফিস কক্ষের। বেশ কিছুদিন আগে গেইটসহ স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে রং করার কাজ করা হলেও ভেতরের অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত। যেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল সেখানে এখন বুক সমান ঘাস। অন্যদিকে স্টেডিয়ামটি এখন হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। 

dhakapost

মো. সবুজ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামটি বন্ধ রয়েছে। কোনো খেলাধুলা হচ্ছে না। যদি খেলাধুলা হতো তাহলে এত ঝোপ জঙ্গল থাকত না। নিয়মিত খেলাধুলা হলে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরি হত। এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পেত।

স্কুল শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেডিয়ামটি খেলাধুলার জন্য উপযোগী না। এখানে উঁচু-নিচু মাঠ এর মধ্যে ঘাস ভরা। ছেলেরা খেলতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ যদি এদিকে নজর দেয় তাহলে ভালো হয়।

জামাল উদ্দিন নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেলা না হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে স্টেডিয়ামটি পরিত্যক্ত হয়ে আছে। এখানে শিয়াল ও সাপের বিচরণ বেড়েছে। আজেবাজে আড্ডা হয়। মাদকসেবীরা নিয়মিত আসে। সরকার যদি নিয়মিত খেলা দেয় তাহলে এই স্টেডিয়ামটির সঠিক ব্যবহার হবে।

স্বেচ্ছায় মাঠের ঘাস কাটছেন চট্রগ্রাম থেকে আসা ফোরকান আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে বড় বড় সাপ আছে, শিয়াল আছে। আমরা ঘাস কাটায় অনেক কমে গেছে। ঘাসগুলো আমাদের সমান হয়ে গেছে। পান গাছে এসব ঘাস ব্যবহার করা হয় তাই আমরা নিজেদের প্রয়োজনে কাটছি। 

dhakapost

তৌহিদুল ইসলাম বাবু নামের এক ফুটবল খেলোয়াড় ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেনবাগ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় খেলেছেন। কিন্তু বর্তমানে খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য আমাদের একটি স্টেডিয়াম থাকলেও সঠিক তদারকির অভাবে স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী না হওয়ায় এ সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। বর্তমানে শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করার সুযোগ না পাওয়ায় মোবাইল, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আগামীতে এ অঞ্চল থেকে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে স্টেডিয়ামটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

স্টেডিয়ামের কেয়ারটেকার দ্বীন মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেডিয়ামের দেখভালের জন্য ২০০৭ সালে ১৫০০ টাকায় আমাকে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫০০ টাকায় কিছুই হয় না। এক মাস বেতন পেলে ৪ মাস বেতন পাই না। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে এখানে পড়ে আছি। স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারিসহ বিভিন্নস্থানে  মাদকসেবীদের আড্ডা প্রতিদিন বাড়ছে। খেলা না থাকায় সাপ ও শিয়ালে ভরে গেছে। 

সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু স্টেডিয়ামের খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত বিশাল স্টেডিয়াম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক খেলার ভেন্যু করার মতো। প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দ্রুত মাঠটি প্রস্তুত করে খেলা উপযোগী করা যাবে।

dhakapost

সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যার ছেলে লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এটি অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। সরকারিভাবে এখানে কোনো নজর নাই। স্টেডিয়ামটি আমার বাবার নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আমি এর সংস্কার কাজ করে দিয়েছি। একটি গেইট করে দিয়েছি এবং বাইরের অংশে রং করে দিয়েছি কিন্তু সেটাও যথার্থ না। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। সব সময় খেলাধুলার আয়োজন থাকলে এভাবে পরিত্যক্ত পড়ে থাকত না। যুব সমাজ খেলাধুলায় যুক্ত থাকলে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে।

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি) আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে পারলে তাদের মাথায় মাদক থাকবে না। স্টেডিয়াম চালু হলে অনেকে মাদক থেকে পরিত্রাণ পাবে। সরকার থেকে ভালো একটা ফান্ড নিয়ে স্টেডিয়ামটিকে খেলাধুলা উপযোগী করার পরিকল্পনা আছে।