ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মায়ের মুখে শুনে পড়াশোনা, শর্মিলীর শ্রুতিলিপিতে পেলেন জিপিএ-৫

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

রিজওয়ান ইসমাম তাসপি। বয়স ২০। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। যে বয়সে অন্য শিশুরা দৌড়ঝাঁপ, হৈ চৈতে মাতিয়ে তুলতো পুরো বাড়ি সে বয়সে রিজওয়ান ছিল একেবারে ভিন্ন। জন্ম থেকেই চোখে না দেখা রিজওয়ান চুপচাপ থাকতো সবসময়। রিজওয়ানের নিত্যসঙ্গী মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

রিজওয়ান ইসমাম তাসপি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কেজি স্কুল রোড এলাকার মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও শাহনাজ পারভিন দম্পতির ছেলে।

রিজওয়ানের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আট বছর বয়সে পড়ালেখা শুরু করে সে। বিভিন্ন সময় জটিলতার কারণে তার পড়ালেখায় নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মায়ের কাছ থেকে পড়া শুনে শুনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন রিজওয়ান। 
রিজওয়ানের ইচ্ছে— পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চায় সে।

পড়াশোনার ক্ষেত্রে রিজওয়ান ইসমাম তাসপির সঙ্গী এবং শিক্ষক তার মা শাহনাজ পারভিন। তিনি বই পড়ে শোনান, ছেলে তা শুনে মুখস্থ করেন। কখনও কখনও তিনি বই পড়ে শোনানোর সময় রেকর্ড করে রাখতেন যা পরবর্তীতে শুনে মুখস্থ করতেন।

তাসপির মা শাহনাজ পারভিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি উত্তর চরকাঁকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আমার একমাত্র পুত্র তাসপি। আরেকটা কন্যা সন্তান রয়েছে। তার নাম রেজবিন ইমরুল। সে এবার এলএলএম শেষ করেছে। আমার হাত ধরে তাসপি স্কুলে যাতায়াত করতো। তার বাবা চট্টগ্রামে পোস্ট অফিসে চাকরি করেন। ফলে আমার কাছেই তাসপির বেড়ে ওঠা। আমার ছেলের পড়াশোনার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সে প্রচণ্ড মেধাবী ফলে কোনো পড়া একবার শুনলে তার মুখস্থ হয়ে যেতো। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। এসএসসি পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক গণিতে সঠিকভাবে না লেখায় জিপিএ-৫ পায়নি। এসএসসিতে সে জিপিএ ৪ দশমিক ৭২ পেয়েছে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারি মুজিব কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় রিজওয়ানকে শ্রুতিলেখক হিসেবে সহযোগিতা করেন তার থেকে তিন শ্রেণী নিচের স্থানীয় মাকসুদা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজওয়ানা শারমিন শর্মিলী।

রিজওয়ানের বাবা মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার সন্তানের ফলাফল পেয়ে আমি খুব খুশি। যারা তার পড়াশোনার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সে জন্য দোয়া করবেন।

রিজওয়ান ইসমাম তাসপি নিজেও তার এ সাফল্যে খুশি। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষক হতে চান তিনি। রিজওয়ান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যুক্ত হতে চাই। আমার মতো কোনো শিক্ষার্থীকে যেন এত কষ্ট না করতে হয় সেই জন্য কাজ করতে চাই। আমার পড়াশোনায় সব থেকে বেশি ভূমিকা আমার মায়ের। শিক্ষক-সহপাঠীরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে শ্রুতিলেখক রেজওয়ানা শারমিন শর্মিলীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি যেন শিক্ষক হতে পারি সেই জন্য সবাই দোয়া করবেন। 

সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষক নুর মোহাম্মদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে দশজন জিপিএ-৫ পেয়েছে তার মধ্যে তাসপি একজন। তাসপি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। আমরা ক্লাসে যা পড়াতাম, সেগুলো সে মনোযোগ দিয়ে শুনত, আর রেকর্ড করে নিত। কখনোই সে ক্লাস ফাঁকি দিত না। তার সাফল্যে আমরা সবাই খুশি। আশা করি সে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।