ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কদর বাড়ছে নিঝুম দ্বীপের খেজুর গুড়ের

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩  

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পর্যটনের পাশাপাশি খেজুরের গুড় তৈরির জন্যও বিখ্যাত। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রাসায়নিক কোনো দ্রব্য ব্যবহার ছাড়াই গুড় তৈরি করেন এখানকার গাছিরা। দিন দিন বাড়ছে এখানকার খেজুর গুড়ের কদর। 

শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন নিঝুম দ্বীপে। বনের হরিণ দেখার পাশাপাশি দ্বীপের বিভিন্ন খাবাররের স্বাদ গ্রহণ করছেন তারা। গাছ থেকেই খেজুরের রস খাচ্ছেন পর্যটকরা। পাশাপাশি খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয় স্বজনদের জন্য। সারাদেশে পাঠানো হচ্ছে এখানকার গুড়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭ হেক্টর জমিতে ৭৩ হাজার ৪৩৩টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। যার মধ্যে সদরের ১০ হেক্টর, বেগমগঞ্জের তিন, সেনবাগের দুই, চাটখিলের এক, কোম্পানীগঞ্জের পাঁচ, হাতিয়ার ৩০, সোনাইমুড়ীর দুই, সুবর্ণচরের ১০ ও কবিরহাট উপজেলার চার হেক্টর জমির ৭৩ হাজার ৪৩৩টি গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমির খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ টন করে।

জানা গেছে, গাছিদের মধ্যে কেউ বংশ পরম্পরায়, কেউ বা শীতের মৌসুমে অর্থনৈতিক লাভের আশায় খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করেন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় খেজুরের রস সংগ্রহ করা হলেও সব চেয়ে বেশি গাছ রয়েছে হাতিয়ায়। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার ৯৭০টি গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে এ দ্বীপে বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের রস সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ ও গুড় উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে দ্বীপের ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে থাকা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে নিঝুম দ্বীপে দেখা যায়, নিঝুম দ্বীপের প্রতিটি সড়কে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছে লাগানো হাড়ি। রাতভর ফোঁটা ফোঁটা রস পড়ে ভর্তি হয় হাড়িগুলো। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সেই রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। গাছিদের সঙ্গে থেকে পরিবারের শিশুরা এগিয়ে দিচ্ছে কলসি-হাড়িগুলো। রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। রস চুলায় জ্বাল দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে লাল গুড় তৈরি হতে। রস জ্বালিয়ে তৈরি করা গুড়ের চাহিদাও অনেক। 

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাতিয়ায় ৩০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে গাছ রয়েছে এক হাজার ৯৯টি। এক একটি গাছে মৌসুমে ১৬ কেজি করে গুড় পাওয়া যায়। তাতে বছরে হাতিয়াতে ৫২৭ টন গুড় পাওয়া যায়।

৪০ বছর ধরে খেজুরের রস ও গুড়ের সঙ্গে জড়িত নামারবাজারের গাছি আবুল কাশেম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন,  প্রায় ৪০ বছর ধরে গাছ কাটি। আমার নিজের গাছ কম আছে। বেশিরভাগ গাছ অন্যের। গাছি হিসেবে আমি অর্ধেক পাই আর গাছের মালিক অর্ধেক পান। ৮০-৮৫ টা গাছ থেকে দুই লাখ টাকার রস বিক্রি করা যায়।

dhakapost

নিঝুম দ্বীপের গাছি আবুল হাসেম ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিদিন বিকেলে ভ্রমণে আসা লোকজন রস খেতে আসেন। বাড়ি থেকে গ্লাস এনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাজা রস খাওয়ান পর্যটকদের। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তাজা রসের স্বাদ গ্রহণ করতে পেরে খুশি পর্যটকরা। কেউ কেউ কাঁচা রস চুলায় বসিয়ে একটু গরম করে নিয়ে যান।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোল্লাগ্রামের বাসিন্দা কৃষক জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতে অন্যান্য কৃষি কাজ কম থাকে। নিঝুম দ্বীপে জেলার সব থেকে বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। এ সময় খেজুর গাছ থেকে ভালো আয় করা যায়। আমি ৮৫টা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। তারপর তাওয়ায় দিয়ে গরম করে গুড় বানাই। সেই গুড় আমরা বিক্রি করি। গুড় পুরো নোয়াখালী-ঢাকাসহ দেশের বাহিরেও পাঠাই। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রস ও গুড় বিক্রি করেন যুবক বেলাল উদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা গাছ থেকে রস সরবরাহ করে। আমি গতকালও নামারবাজারে পর্যটকদের কাছে রস পৌঁছে দিয়েছি। তারা রস খেয়ে খুব খুশি। পাশাপাশি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনেও বিক্রি করি। 

নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা তানিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ১৯ জন ঘুরতে এসেছি। নিজেরাই পেড়ে তাজা রস খাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। ফেরার পথে পরিবারের সকলের জন্য গুড় নিয়ে যাব। পিঠা-পায়েসে এই গুড় ব্যবহার করব। 

স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, পর্যটকদের কাছে খুব পছন্দের হলো খেজুরের রস। তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে গাছের নিচ থেকে রস খান। তাজা রস খাওয়াকে তারা খুব আনন্দের বিষয় মনে করেন। পাশাপাশি রসের গুড় তারা তাদের পরিবারের জন্য নিয়ে যান। শীতকালে নিঝুমদ্বীপের ৮০ শতাংশ মানুষ খেজুরের রস সংগ্রহ ও বিক্রির কাজে জড়িত হয়।
 
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেজুরের গুড়ের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। বাণিজ্যিকভাবে এটি ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। লবণাক্ত জায়গায় খেজুর গাছ ভালো হয়। নিঝুম দ্বীপে বেড়িবাঁধ নেই। যদি বেঁড়িবাধ হলে গাছগুলো সংরক্ষণ করা যেত। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে  বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিঝুমদ্বীপে নোনা পানি প্রবেশ করে। খেজুর গাছের জন্য নোনা পানি আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। এখানে খেজুর গাছের সংখ্যা সব থেকে বেশি। খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে এখানে শীতকালে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। কোনো কোনো গাছি দুই-চার লাখ টাকা রোজগার করেন এক শীতে। খেজুর গাছে বাড়ানোর জন্য আমরা কৃষি বিভাগ ও বনবিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করছি। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী জেলায় প্রায় ৬৭ হেক্টর জমিতে খেজুরের চাষ হচ্ছে। এখানে প্রায় ৭৪ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালে আসা পর্যটকরা খেজুর রস খুব পছন্দ করেন। এই রসের গুড় তারা বাড়িতে নিয়ে যান।