ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

নিঝুম দ্বীপে সড়কের বেহাল দশা, দ্বিতীয়বার যেতে অনাগ্রহ পর্যটকদের

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩  

নোয়াখালীর মূল আকর্ষণ নিঝুম দ্বীপ। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্নস্থান থেকে সারাবছরই পর্যটক আসে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। কিন্তু প্রধান সড়কের বেহাল দশায় চলাচলে বেগ পেতে হয় পর্যটক ও স্থানীয়দের । ফলে একবার আসলে আর দ্বিতীয়বার কোনো পর্যটক আসতে চান না এখানে। পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছে দ্বীপটি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের স্রোতে দ্বীপের প্রধান সড়কটির নিচে মাটি সরে গিয়ে ভেঙে পড়েছে ওপরের আরসিসি ঢালাইয়ের বিভিন্ন অংশ। সড়কের অনেকাংশে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্ত। যাত্রী নামিয়ে খালি গাড়ি পার করছেন চালকরা। মোটরসাইকেল পার হলেও সিএনজি ও টমটম পার করতে অনেক কষ্ট হয়। দুই-তিন জন মিলে ধাক্কা দিয়ে পার করতে হয় গাড়ি।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে আইলা প্রকল্পে বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার বিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আরসিসি ঢালাইয়ে ১০ কিলোমিটারের এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১২ বছরে একবারও করা হয়নি মেরামত। সড়কটি বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে একাধিবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

dhakapost.

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সামান্য মাটি দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হলেও কিছুদিন পর তা আবার গর্তে পরিণত হয়। সবশেষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় এই সড়কের ওপর দিয়ে ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। এতে সড়কটি ভেঙে অনেক জায়গায় খালে পরিণত হয়। শিগগিরই সড়ক  নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মিলাদ উদ্দিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে মেইন রোডের অবস্থা খুব খারাপ। জোয়ারের পানির সঙ্গে সব সড়ক ভেঙে যায়। মেরামত করা হলেও আবার জোয়ারে ভেঙে যায়। গাড়ি চলতে পারে না। মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়।

আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জোয়ারের কারণে নিঝুম দ্বীপের সব রাস্তা ঘাট ভাঙা। আমরা স্কুলে যারা পড়াশোনা করি তাদের আসা যাওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। যদি রাস্তা ভালো হতো তাহলে স্কুলে আসতে সুবিধা হতো। এছাড়াও দিন দিন পর্যটকদের ভীড় কমে যাচ্ছে। তাই রাস্তা নির্মাণ করা জরুরি। 

dhakapost

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একমাত্র সড়কটির বেহাল দশা। পর্যটকরা একবার আসলে দ্বিতীয়বার আসে না। প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে কিছুদিন আগেও ইউপি সদস্যের ছেলে মারা গেছে। 

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের ভোগান্তি প্রতিদিন ভোগ করছি। যাত্রী নামিয়ে গাড়ি পার করতে হয়। কেউ ধাক্কা না দিলে গাড়ি চলে না। এতে পর্যটকদের ভোগান্তি হয়। রাস্তা খারাপের কারণে ভাড়ার সংখ্যাও কমে গেছে। আগে পাঁচ ট্রিপ মারলেও এখন তিন ট্রিপের বেশি পাওয়া যায় না।

মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা আবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ভাড়া ৫টা মারতে পারতাম এখন মারতে হয় ৩টা। যে রাস্তা তাতে বেশি ভাড়া নেওয়া যায় না। শরীর খারাপ হয়ে যায়। রাতে শরীর, বুকে ব্যাথা হয়। সকালে উঠতে পারি না অসুস্থতার কারণে। 

সপরিবারে নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তাঘাট ভীষণ খারাপ। আমরা যতটুকু এনজয় করেছি রাস্তাঘাটের কারণে খুব বিরক্তবোধ করছি। রাস্তাঘাট ভালো হলে খুব মজা করতে পারতাম।  

আহাদুজ্জামান নামের আরেক পর্যটক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নিঝুম দ্বীপে আসার সুযোগ-সুবিধা ভাল ছিল। কিন্তু রাস্তাঘাটের কারণে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ভালো হলে পর্যটকদের সুবিধা হতো।

সুজন ইসলাম নামের আরেক পর্যটক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরের বার আসব কিনা বলা যায় না। ব্রিজ নেই, সড়ক নেই, কীভাবে কি চলে বুঝি না। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে কেউ একবার এলে পরের বার আর আসবে বলে মনে হয় না। যদি রাস্তাঘাট ঠিক হয় তাহলে মানুষ দ্বিতীয়বার আসতে পারে।

dhakapost

নিঝুম দ্বীপের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘুর্ণিঝড়ে জলোচ্ছ্বাসে নিঝুম দ্বীপের সড়কের অবস্থা খারাপ। সারাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু নিঝুম দ্বীপে উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ কারণ উনার কারণে বিদ্যুৎ নিঝুম দ্বীপে পৌঁছেছে। কিন্তু সড়কগুলো করে দিলে পর্যটকদের সুবিধা হতো। বিশেষ করে বেঁড়িবাধ করে দিলে নিঝুম দ্বীপের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যেতো।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত বেহাল দশা যে পর্যটক ও সাধারণ মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের একমাত্র সড়কটি ২০১১ সালে নির্মাণ হলেও একবারও তা মেরামত করা হয়নি। আমি দাবি জানাচ্ছি যেনো রাস্তাটির উচ্চতা বাড়িয়ে এবং প্রশস্ত করে দ্রুত নির্মাণ করা হয়। আমরা আশা রাখি মাননীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের সহযোগিতায় দ্রুত রাস্তাটি হবে। 

হাতিয়া উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা কারণে সড়কটি মেরামত করা হয়নি। আসলে নিঝুম দ্বীপে আরসিসি ঢালাই ছাড়া রাস্তা নির্মাণ সম্ভব নয়। জোয়ারের প্রভাবে অন্য রাস্তা টেকানো সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কটি দেখে গেছেন। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারসহ একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রাস্তাটি নতুন করে তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বলা হয়ে থাকে পর্যটনের রাজধানী হাতিয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি টিম পরিদর্শনে এসেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাঘাট নির্মাণ সহ নানান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে করে পর্যটকরা বারবার আসবেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।