ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

"রোহিঙ্গা নিপীড়নের পুরো দায় সামরিক বাহিনীর"

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২২  

মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের দায় পুরোপুরি ওই দেশের সামরিক বাহিনীর।  তারা নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে, যে কারণে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার স্বদেশে ফিরে যাওয়া বর্তমান জান্তা সরকারের সময় সম্ভব হবে না। মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার জাতীয় ঐক্য সরকারের (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট—এনইউজি) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুআ লাসি লা ২৪ আগস্ট একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।


উল্লেখ্য, গত ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী অং সান সু চির সরকারকে উত্খাত করে ক্ষমতা দখল করে। মিয়ানমারের জনগণের ভোটে নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকার, যা সর্বদলীয় সরকার নামে পরিচিত দেশে-বিদেশে জনমত গঠনসহ অন্যান্য কাজ করছে। ওই সরকারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বর্তমানে মিয়ানমারে কারাবন্দি। দুআ লাসি লা এই সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি কালের কণ্ঠ’র বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।


মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারকে এ পর্যন্ত কয়টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে, জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বা প্রকাশ্যে এখনো কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। আবার স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলকেও (মিয়ানমার মিলিটারি) আজ পর্যন্ত কেউ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বর্তমানে জাতীয় ঐক্য সরকার মিয়ানমারের একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সরকার গঠিত। মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীসহ সব স্তরের প্রতিনিধিরা এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশ যে সংকটময় পরিস্থিতিতে আছে তার একমাত্র সমাধান ফেডারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমরা বিভিন্ন সশস্ত্র নৃগোষ্ঠী, নাগরিক সমাজ সংগঠন, অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত পক্ষ এবং অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এ লক্ষ্যে কাজ করছি।’


জাতীয় ঐক্যের সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং সবাইকে নিয়ে দেশ পরিচালনার কথা বলেছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এতে কতটা আশ্বস্ত হবে, জানতে চাইলে দুআ লাসি লা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবাসনসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিগত সরকারের চুক্তির বিষয়ে জাতীয় ঐক্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’


জাতীয় ঐক্য সরকার সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে (আইইসিসি) জানিয়েছে যে তারা এই আদালতের বিচারিক এখতিয়ার মেনে নেবে। এটি অং সান সু চির সরকারের অনুসৃত নীতির পরিবর্তন কি না, জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জানান, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার আগের সরকারের চেয়ে আরো স্বাধীনভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম। আগের সরকারকে চলতে হয়েছে ২০০৮ সালের সংবিধানের সীমাবদ্ধতার মধ্যে। সেখানে সামরিক বাহিনীকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে স্টেট কাউন্সেলর (অং সান সু চি) আমাদের জাতীয় ঐক্যের সরকারেও একই পদে আছেন।’


মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা স্থবির হয়ে গেছে। এতে কি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ল—কালের কণ্ঠ’র এ প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেন, মিয়ানমারের ওপর কোন সরকারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আছে তার ওপর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পুরোপুরি নির্ভর করছে। যত দিন মিলিটারি কাউন্সিল (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল) ক্ষমতায় আছে তত দিন এ ধরনের প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ সামরিক বাহিনী শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারে না।


বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা, জানতে চাইলে দুআ লাসি লা বলেন, জাতীয় ঐক্য সরকারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরকারই শুধু ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের কাছ থেকে জাতীয় ঐক্য সরকারের ক্ষমতা গ্রহণে সহায়তা ও সহযোগিতাই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি ভালো ভবিষ্যতের একমাত্র আশা হতে পারে।


 জানতে চাওয়া হয়েছিল যে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পর চার বছর পেরিয়ে গেল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গত চার বছরে কী করেছে? অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে রোহিঙ্গারা ‘জেনোসাইডের’ শিকার। এ বিষয়ে নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকারের কী অবস্থান? মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের দায় কার? জবাবে জাতীয় ঐক্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেন, বিগত দশকগুলোতে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ দায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর।


রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহি ইস্যুতে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুআ লাসি লা বলেন, তাঁদের সরকার এরই মধ্যে আইসিসির নিবন্ধকের কাছে একটি ঘোষণাপত্র জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আইসিসির রোম সংবিধির ১২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ২০০২ সালের ১ জুলাই (রোম সংবিধি কার্যকর হওয়ার তারিখ) থেকে সামরিক বাহিনীর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক এখতিয়ার জাতীয় ঐক্য সরকার মেনে নিয়েছে। এটি গুরুতর সব অপরাধের হোতাদের জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে।