ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

কিভাবে শ্রীলংকা ধ্বংসের পথে গেল?

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২  

কিভাবে শ্রীলংকা ধ্বংসের পথে গেল? বাংলাদেশেও কি একি অবস্থা হতে পারে?  প্রশ্নগুলির উত্তরের সন্ধানে কিছু ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ননা দরকার। 
শ্রীলংকাকে উপমহাদেশের সবথেকে উন্নত দেশ বলা চলে। মাথাপিছু আয়, উচ্চ জীবনমান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,বিদ্যুৎ খাতে উপমহাদেশের অন্যদেশের থেকে যোজন এগিয়ে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। প্রশ্ন হল, হঠাৎ কি এমন হল যে এরকম একটি দেশ দেউলিয়া হবার আশঙ্কায় রয়েছে? 
শ্রীলংকাকে সারা বিশ্ব চেনে উন্নতমানের চা এর জন্য। সিলন চা এর ব্রান্ডিংটা সেদেশ ছাপিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের নামকরা প্রিমিয়াম টি ব্রান্ড টোয়াইনিংস, মরিসনস, লা পারসে ও সিলন চা তাদের প্রডাক্ট লাইনে রেখেছে। এছাড়া শ্রীলংকার ব্রান্ড ডিলমা কেও সারা বিশ্ব চেনে। চা এর জগতে সিলন নামটি একটা বিশেষ ব্রান্ডে রুপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস হিসাবে চা তাদের অর্থনীতিতে ২০২১ সালে প্রায় $১.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অবদান রেখেছে। জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২%। 
২০২১ সালে শ্রীলংকার অর্থনীতির আকার ছিল $৮১ বিলিয়ন ডলার যা মাত্র দুই বছর আগে ২০১৯ সালে ছিল $৮৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম দেশটিতে কমেছে। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৪% যা এই অঞ্চলের কোন দেশের ছিলনা।  প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে কি এমন ঘটেছে যে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া হবার মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে? 
দেশটির অর্থনীতির সবথেকে বড় অবদান রাখে যে খাত সেটি হল ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি।  ২০১৯ সালে হিসাব অনুযায়ী এই খাতের অবদান জিডিপিতে ছিল ১২.৬%। ২০০০ সালেও এই খাতের অবদান ছিল মাত্র ৬%। বিষয়টিকে ভাল ভাবে বুঝতে গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে তুলনা করা যাক। বাংলাদেশের জিডিপিতে বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ১১%। প্রতিবছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও জিডিপিতে এর অবদান ক্রমহ্রাসমান।  এর কারন হিসাবে দেখা যায় যে দেশের অর্থনীতিতে এখন আমদানি বিকল্প অনেক শিল্প গড়ে উঠছে, আবার অপ্রচলিত অনেক পণ্যের উৎপাদন শুরু হচ্ছে দেশে। মিরসরাই ইকোনমিক জোনের মত অনেক গুলি ইকোনমিক জোন সৃষ্টি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক খবর হল ম্যাকডোনাল্ড স্টিল যমুনা রেল সেতুর জন্য ব্যাবহৃত পাইলিং রড উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে। এশিয়ান পেইন্টস তাদের সব থেকে বড় কারখানা মিরসরাই তে করেছে। বার্জার ও কারখানা করেছে। ফলে রং আমদানির পরিবর্তে হয়ত রপ্তানিতে এই খাত যুক্ত হবে। এদেশের শিল্পগ্রুপগুলি ঝুকি নিয়ে নতুন নতুন পণ্য বাজারে আনছেন। প্রোডাক্ট লাইন বড় করছেন। এই নানাবিধ কর্মের ফলেই শতকরা হিসাবে তৈরি পোশাকের অবদান কমছে। তবে রপ্তানিতে এই খাত এখনো বড় এক্সপোজার নিয়ে আছে। 
শ্রীলঙ্কায় সমস্যার শুরু হয় কোভিড-১৯ হানা দেবার পর। সারা বিশ্বে যখন ফ্লাইট বন্ধ, শ্রীলঙ্কায় তখন ট্যুরিস্ট আসাও বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার এই খাতে প্রায় $৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এই ধাক্কা সামলানোর জন্য দেশটি কার্যকর কোন ব্যাবস্থা নিতে পারেনি। ফলে দ্রুত কমতে শুরু করে দেশটির রিজার্ভ।  ২০২১ সালে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস রেমিটেন্স প্রায় ২২.৭% কমে $৫.৫ বিলিয়নে দাঁড়ায়। 
পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কা অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। কিছু উদাহরন দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। অর্গানিক সার ব্যাবহারের সিদ্ধান্ত নেয় সেদেশের সরকার। বিকল্প ব্যাবস্থার কথা চিন্তা না করেই হুট করে রাসায়নিক সার আমদানি বন্ধ করে শ্রীলঙ্কা চেয়েছিল সার আমদানি বাবদ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হল দেশটিতে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধের ফলে ২০ মিলিয়ন কৃষক পড়েন বিপাকে। এতে দেশটির খাদ্য ও অন্যান্য কৃষি উৎপাদন কমে যায় প্রায় ২০%। যে দেশটিকে কখনো চাল আমদানি নিয়ে ভাবতে হয়নি সে দেশটিই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। খাদ্য সঙ্কটের কারনে শ্রীলংকাকে $৪৫ কোটি ডলার ব্যয় করতে হয় শুধুমাত্র চাল আমদানির জন্য। চা উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতি হয় প্রায় $৪২.৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ সার আমদানির কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে তাদেরকে কয়েক গুন বেশি অর্থ ব্যয় করে খেসারত দিতে হয়েছে। 
২০২২ এর জানুয়ারিতে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র $২.৩৬ বিলিয়ন ডলার যার মধ্যে তাৎক্ষণিক ব্যাবহারের মত ছিল মাত্র $০.৫ বিলিয়ন ডলার। বিগত দুই বছরে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৭০%। দেশটির দীর্ঘমেয়াদী ঋন রয়েছে $৫১ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে বন্ড আকারে রয়েছে $১৫ বিলিয়ন ডলার। শুধুমাত্র চলতি বছরেই শ্রীলঙ্কার ঋন পরিশোধ করতে হবে $৭ বিলিয়ন ডলার। অনেক গুলি বন্ডের ম্যাচুউরিটিও আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার ঋন শোধের কোন উপায় নেই। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ঘাটতি না থাকলেও জ্বালানি কিনতে না পারায় ১০ ঘন্টা বা তারো বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে লোডশেডিং চলছে। 
চালের কেজি দাড়িয়েছে ৫০০ রুপি। নিত্য দ্রব্যের মূল্য এতটায় বেড়েছে যে তাদের ইতিহাসে এত বড় বিপদে তারা আগে পড়েনি। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কা বেশ কিছু দেশের কাছে ঋন চেয়েছে। বাংলাদেশের কাছেও অতিরিক্ত $২৫০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ শুধুমাত্র আগের শর্ট টার্ম ঋনের মেয়াদ এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করবে বলেছে। নতুন করে আর ঋন দেয়া হবেনা। 
এদিকে শ্রীলঙ্কার দুর্দিনে ৪০ হাজার টন তেল পাঠিয়েছে ভারত। তবে এর কোন কিছুই তাদের বর্তমান সমস্যার সমাধান করবে না। 
এই পরিস্থিতির জন্য শ্রীলঙ্কার অদক্ষ শাসনকে দায়ী করা যেতে পারে। দেশটির মন্ত্রীপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি রাজাপাকসে পরিবারের হাতে। এমনকি অর্থমন্ত্রনালয় ও।
তবে সবথেকে জরুরি যে বিষয়টা, সেটি হল ডেট ম্যানেজমেন্টে ব্যার্থতা। এই ব্যার্থতার জন্যই পাকিস্তানকেও বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। 
শ্রীলংকা অথবা পাকিস্তান উভয়েই তাদের দেশে অপ্রয়োজনে ঋন করেছে। কলম্বো বন্দরের সক্ষমতার ৪০% ব্যাবহার করতে না পারলেও ঋন করে হাম্বানটোটা বন্দর করেছে যেখান থেকে তাদের ইকোনমিক রিটার্ন নেই বললেই চলে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে করাচী বন্দরের সক্ষমতার ৫০% অববহৃত থাকা সত্ত্বেও গওধরের মত  নতুন বন্দর করেছে। কোন প্রকল্প হাতে নিলে সেটার রিটার্ন হিসাবে আনা উচিত সবার আগে। অথবা রিটার্ন পাবার জন্য যদি সাপ্লিমেন্টারী প্রকল্প নেয়া লাগে সেটিও নেয়া উচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর তার সক্ষমতার পূর্ন ব্যাবহার করেও চাহিদা পূরন করতে পারছে না। এ প্রেক্ষিতে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ হাব হিসাবে যেমন কাজ করবে, সেই সাথে গভীর সমুদ্র বন্দরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠায় উচ্চ রিটার্নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। 
তবে সবক্ষেত্রে বিষয়টি একরকম নয়। সম্প্রতি প্রায় ৪১ বিলিয়ন ডলারে ঢাকায় সাবওয়ে নির্মাণের মত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এর থেকে শহরের আয়তন বাড়িয়ে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা সাশ্রয়ী। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋন $৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে যা খুব সুখকর নয়। যদিও বাংলাদেশের ঋন, বিপদসীমার অনেক কম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাইনারি রিকারসিভ ট্রি এর মত বেশ কিছু মডেল অনুসরন করে এবং ডেট ম্যানেজমেন্টে কিছুটা হলেও সফল। তবে যথেচ্ছ প্রকল্প নেয়াটা ভবিষ্যতে আমাদের বড় রকমের বিপদে ফেলবে না তার নিশ্চয়তা নেই।