ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা ২১ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে সেতু, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ শিক্ষামন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমপি বাহারের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দেখছেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জুতা ব্যবসায়ী থেকে বাংলায় গদ্য সাহিত্যের জনক উইলিয়াম কেরি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২১  

কলকাতায় তখন মিশনারিরা এসে ভিড় জমাচ্ছে। সময়টা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল। মিশনারিদের আসার ব্যাপারটা যে ব্রিটিশরা খুব একটা ভালোভাবে নিয়েছিল তাও নয়। কারণ কোম্পানি তখনও এ দেশে ব্যবসা করতে চাইছিল। তাই ধর্ম প্রচার ঘিরে কোনো সমস্যা তৈরি হোক সেটা কোম্পানি চাইছিল না।

আরও অনেকের মতো ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলেন উইলিয়াম কেরি। তিনি কাজ করতেন একটা জুতা তৈরির কারখানায়। কিছু দিন পর তিনি বিয়ে করেন জুতা কারখানার মালিকের শ্যালিকাকে। মালিকের মৃত্যু পর তিনিই হয়ে যান মালিক। তবে এই মালিকটির ঝোঁক ছিল ভাষা শেখা ও ধর্ম প্রচার। ব্যবসা চালাতে চালাতেই তিনি শিখে ফেলেন হিব্রু, ইতালিয়ান, ডাচ, ফ্রেঞ্চ আর গ্রিক ভাষা। তার পাণ্ডিত্যের কারণে তিনি একটি স্কুলে পড়াবার জন্যও ডাক পান। তিনি নিয়মিত গির্জায় গিয়ে ভাষণ দিতেন। এরপরই তার মনে হয় পৃথিবীর মানুষকে খ্রিস্টধর্মের পবিত্র আলোকের মধ্যে নিয়ে এসে দীক্ষা দেওয়া উচিত। 

 

উইলিয়াম ইংল্যান্ডে থাকতে কাজ করতেন এক জুতা কারখানায়

উইলিয়াম ইংল্যান্ডে থাকতে কাজ করতেন এক জুতা কারখানায়

একদিন উইলিয়াম কেরি ধর্ম প্রচারের মহান ব্রত নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। জুতার ব্যবসা গুটিয়ে তিনি একদিন সপরিবারে ভারতে পৌঁছালেন। সময়টা ১৭৯৩ সালের ১৩ জুন, কেরি উপমহাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। নভেম্বরে তিনি ও তার সহযাত্রীগণ কলকাতায় পৌঁছান। তখন তার বয়স ৩১ বছর।

এখানে এসে পড়লেন মহা সমস্যায়। কোনো মানুষই তার কথা বুঝতে পারে না। মাত্র কয়েকজনের যৎসামান্য ইংরেজি জ্ঞান। কেরি বুঝলেন তাকে বাংলা শিখতে হবে। কিন্তু বাঁচতে একটা কাজ চাই। পেয়েও গেলেন। এক নীলের কারখানায় ম্যানেজার হয়ে সপরিবারে চলে গেলেন মেদিনীপুর। সেখানে কেরি ছয় বছর কাজ করেছেন পাশাপাশি যথেষ্ট বাংলা শিখে ফেলেন। কেবল তাই নয়, নিউ টেস্টামেন্ট-এর অনুবাদও করে ফেলেন। ইতিমধ্যে তার স্ত্রী ডরোথি বাকি জীবনের জন্য বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান। 

 

১৭৯৩ সালে অন্যান্য মিশনারির সঙ্গে স্বপরিবারে ভারতে চলে আসেন কেরি

১৭৯৩ সালে অন্যান্য মিশনারির সঙ্গে স্বপরিবারে ভারতে চলে আসেন কেরি

কেরি মেদিনীপুর থেকে শ্রীরামপুরে চলে এলেন। তখনও বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়নি। রামমোহনও কেরির থেকে বেশ ছোট। বাঙালিরা তখন বাংলা ভাষাতেই কথা বলে, কিন্তু বাংলা গদ্য ভাষাটা একেবারেই আয়ত্তে ছিল না বলা যায়। ছাপাখানা এসে গেছে, কিন্তু কিছু চিঠিপত্র ছাড়া বাংলা সাহিত্য বলতে পুরনো কালের কবিতা। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য অনেক ভাষাতেই গদ্য ভাষায় রচিত হচ্ছে গল্প-উপন্যাস। কিন্তু বাংলায় তা লেখার মতো কেউ নেই।  

শ্রীরামপুরে কেরি একটা ছোটখাটো প্রেস চালু করলেন। সেখানে নানা ভাষায় বাইবেল ছাপাচ্ছিলেন। এর মধ্যে তিনি সংস্কৃত, ওড়িয়া ভাষাও শিখলেন। বাংলায় একটা বই রচনা করে ছাপালেন নিজেদের প্রেসে। সে বইটির নাম ‘ইতিহাসমালা’। কিন্তু তা কোনো ইতিহাসের বই নয়। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেও রচিত নয়। তাতে ছিল অনেকগুলি ছোট ছোট গল্প। বেশিরভাগই লোককাহিনি। যা সাধারণত লোকের মুখে মুখে ছড়ায়। তবে সেই বই রচনায় তার মুন্সি রামরাম বসুর যথেষ্ট সাহায্য নিয়েছিলেন।

 

কলকাতায় এসে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রামরাম বসুর কাছে বাংলা শিখতে আরম্ভ করেন

কলকাতায় এসে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রামরাম বসুর কাছে বাংলা শিখতে আরম্ভ করেন

কিন্তু একজন ধর্মপ্রচারক এই গল্পের বই ছাপলেন কেন? শুধু কি বাংলা গদ্যের একটা স্পষ্ট রূপ দেওয়াই তার উদ্দেশ্য ছিল? ‘ইতিহাসমালা’বাংলা ভাষার অন্যতম প্রথম গদ্য গল্পের বই। কিন্তু দুঃখের বিষয় বইটি ছাপা হওয়ার পরই আগুন লেগে প্রেস ও গুদামের অনেকখানি ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে ইতিহাসমালা সমস্ত বইগুলো। কেউ বলেন ওই বইয়ের কিছু কিছু গল্পে নীতিবাগীশদের আপত্তি ছিল, তাদেরই কারও নির্দেশে আগুন লাগানো হয়। যাই ঘটুক বাংলা প্রথম গদ্য সাহিত্য গণ্য হওয়ার মতো বইটির কথা কেউ জানতে পারল না।

লং সাহেবের বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থের তালিকায় এই বইয়ের নাম নেই। এমনকি কেরি সাহেবের রচনাবলিতেও এই বইয়ের নাম স্থান পায়নি। কোনোক্রমে ইতিহাসমালার বেঁচে যাওয়া দু’চার কপির একটি খুঁজে পেয়ে প্রথম মুদ্রণের একশো ষাট বছর পরে ফাদার দ্যতিয়েন একটি সঠিক সংস্করণ প্রকাশ করেন। সেটিও অমিল হয়ে যায়। ফের একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করে ‘গাঙচিল’। বইটি সম্পর্কে লেখেন চিন্ময় গুহ এবং রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়াম কেরি

১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়াম কেরি

১৮৩৪ সালের ৯ জুন ৭৩ বছর বয়সে উইলিয়াম কেরির মহান কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি। শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিদের সমাধিক্ষেত্রেই তাকে সমাহিত করা হয়।