ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্লিওপেট্রার রহস্যজনক মৃত্যুর পর সমুদ্রে ডুবে যায় তার সাম্রাজ্য

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০২১  

প্রাচীন মিশরের রানি ক্লিওপেট্রার অধ্যায় যেন শেষ হইয়াও হচ্ছে না। এই নামটির সঙ্গে জড়িতে আছে হাজারো ইতিহাস। মিশরের এই রানির জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রহস্য লুকিয়ে আছে। ক্লিওপেট্রার প্যালেসের সন্ধান পাওয়া গেছে একটি দ্বীপের গভীর পানির নিচে। ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই প্যালেসে আছে ক্লিওপেট্রার একটি চমৎকার ভাস্কর্য। তার রাজত্ব শেষ হওয়ার কয়েক শতাব্দী পর ভূমিকম্প কিংবা সুনামিতে প্যালেসটি ধ্বংস হয়ে ডুবে গিয়েছিলে পানির নিচে।

মিশরের রাজা বা ফারাওদের কথা বললে তৎক্ষণাৎ আমাদের চোখে নীল আর সোনালি মুকুট পরে সিংহাসনে বসে থাকা একজন পুরুষের অবয়বই ভেসে ওঠে। যদিও মিশরের শাসকদের বেশিরভাগই পুরুষ ছিলেন। তারপরও ফারাও শব্দটা বিরলভাবে নারী শাসকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হত। মিশরের ইতিহাসে নারী ফারাওরা বেশখানিকটা জায়গা জুড়েই রয়েছে। মিশরের সমৃদ্ধিতে তাদের অবদানও অনেক। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মিশরের তিন হাজার বছরের ইতিহাসে ১৭০ জন ফারাওয়ের মাঝে সাত জন ছিলেন নারী। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং সমালোচিত ছিলেন ক্লিওপেট্রা। সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তার জন্য বিখ্যাত ছিলেন এই নারী। সারা বিশ্বের অভিজাত পুরুষ, রাজা, এমনকি সাধারণ পুরুষেরাও পাগল ছিল ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ক্লিওপেট্রা তার সৌন্দর্যের অসৎ ব্যবহার করেছেন। আবার অনেকের মনে খুবই অসহায় নারী ছিলেন এই ক্লিওপেট্রা।

১৯৯৮ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ববিদ ফ্রাঙ্ক গোডিও ক্লিওপেট্রার হারিয়ে যাওয়া প্রাসাদটি খুঁজে পান। গোডিও ডিস্ক আলেকজান্দ্রিয়া স্ট্র্যাবো নামে এক গ্রিক ইতিহাসবেত্তার প্রাচীন একটি লেখা আবিষ্কার করেন। স্ট্র্যাবো লিখেছিলেন, আলেকজান্দ্রিয়ার খুব কাছেই একটি দ্বীপের নাম ছিলে অ্যান্ডিহরডোস। সেই দ্বীপেই ছিলে ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ। 

দশ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে গোডিওর দল ১৯৯০ সালে দ্বীপটি খুঁজতে থাকেন। অনুসন্ধানকালে প্রথমে তারা ৩০ মিটার দীর্ঘ্য কার্গো জাহাজের একটি ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। তার মধ্যে গয়না, চুলের কাঁটা, আংটি ও কাঁচের পেয়ালা ছিলে। এরপর  খুঁজে পান প্রাচীন জাহাজঘাটের একটি ধ্বংসাবশেষ। আরও খুঁজে পান মিশরীয় লাল গ্রানাইট পাথরের ৭ মিটার উঁচু ও ৪ মিটার দৈর্ঘ্যের কলাম ও প্রবেশদ্বার। তাতে প্রাচীন চিত্রকলা দিয়ে সজ্জিত ছিল। 

রানি ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেটর ছিলেন গ্রিক টলেমেক রাজবংশের শেষ শাসক। একজন শক্তিশালী মিশরীয় ফারাও। তার সৌন্দর্য এখনো রুপকথার মতো। রোমান নেতা জুলিয়াস সিজার ও মার্ক অ্যান্টোনির সঙ্গে তার প্রেম ইতিহাসে বিখ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬৯ সালে জন্ম ক্লিওপেট্রার। ক্লিওপেট্রা ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫১ থেকে ৩০ সাল পর্যন্ত ২১ বছর তিনি মিশর শাসন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করেন।

ক্লিওপেট্রা জীবনে দুইবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্বামী টলেমি ত্রয়োদশ থিওস ফিলোপেটর এবং দ্বিতীয় স্বামী টলেমি চতুর্দশ ফিলোপেটর। মার্ক অ্যান্টোনি ছিলেন তার প্রেমিক। বিবাহিত জীবনে ক্লিওপেট্রা চার সন্তানের মা হন। প্রথম ক্লিওপেট্রা সেলেনি দ্বিতীয়, সেকেন্ড সিজারিওন, তৃতীয় টলেমি ফিলাডেলফাস ও চতুর্থ আলেকজান্ডার হেলিওস। 

ইতিহাসবিদদের মতে, রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টোনির প্রতিদ্বন্দী ছিলেন অক্টোভিয়ান। ক্লিওপেট্রার সঙ্গে প্রেম নিয়ে অ্যান্টোনি ও অক্টোভিয়ান খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালে যুদ্ধে জড়ান। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ব্যাটল অব দ্য অক্টিয়াম নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে রোমান সাম্রাজ্যের জনগণ অক্টোভিয়ানকে সমর্থন দেয়। যুদ্ধে ক্লিওপেট্রাও সৈন্য পাঠান। কিন্তু ৩০ সালে ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনির যৌথবাহিনি অক্টোভিয়ানের কাছে হেরে যান। যুদ্ধে হেরে  ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনি পালিয়ে আসেন আলেকজান্দ্রিয়ায়।

অক্টোভিয়ান বিপুল সৈন্য নিয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালের শেষের দিকে পৌঁছান আলেকজান্দ্রিয়ায়। অ্যান্টোনির কাছে খবর পৌঁছায় ক্লিওপেট্রা মারা গেছেন। এই খবর শুনেই অ্যান্টোনি নিজের তলোয়ার বুকে বিদ্ধ করেন। তখন ক্লিওপেট্রা মন্দিরে ছিলেন। সৈনিকরা রক্তাক্ত অ্যান্টোনিকে ক্লিওপেট্রার কাছে নিয়ে যান। রানির কোলেই তার মৃত্যু ঘটে।  

তখনো অ্যান্টোনির শেষকৃত্য হয় নি। অক্টোভিয়ান ক্লিওপেট্রার কাছে গোপন দূত পাঠান। ক্লিওপেট্রাকে বলা হয়, জেনারেল অক্টোভিয়ান রানি ক্লিওপেট্রা ও তার সন্তানদের রোমে ধরে নিয়ে যাবেন। এ খবর পাওয়া মাত্রই আইরাস ও চারমিওন নামে দুই দাসীকে নিয়ে ক্লিওপেট্রা মন্দিরে আত্মগোপন করেন। অক্টোভিয়ানের কাছে একটি চিরকুট পাঠান ক্লিওপেট্রা।

চিরকুটে অ্যান্টোনির সঙ্গে সমাধিস্থ করার অনুরোধ করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। চিরকুট পেয়েই ক্লিওপেট্রার সেই মন্দিরের কক্ষে সৈন্য পাঠান অক্টোভিয়ান। কক্ষটি তখন ভেতর থেকে বন্ধ ছিলে। প্রহরীরা ভেঙে ফেলেন দরজা। ভেতরে ঢুকে সৈন্যরা দেখতে পায় সোনার পালঙ্কে পড়ে আছে রানি ক্লিওপেট্রার লাশ। রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মার্ক অ্যান্টোনির সঙ্গেই সমাধিস্থ করা হয় ক্লিওপেট্রার মরদেহ। 

রানি ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনির মৃত্যুর পর রোমান সামাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় প্রাচীন মিশর। তখন মিশরের রাজধানী ছিলে আলেকজান্দ্রিয়া। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। কিন্তু রোমের অধীনে চলে যাওয়ার পর স্বাধীনতা হারায় ক্লিওপেট্রার দেশ। চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবীর বিস্ময় আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর।