নবীনগরে চাচাতো ভাই হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব দিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মো. এরশাদুল হক ও বাদল সরকার হত্যাকাণ্ডের চার দিন পার হলেও এর রহস্য উদঘাটিত হয়নি। পুলিশ একের পর এক অভিযান চালালেও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। পুলিশ বলেছে, আসামিরা বেশ চতুরতার সঙ্গে অবস্থান পরিবর্তন করছে। সে কারণে তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। 

পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচনের বাইরে অন্য একটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্তকাজ এগোচ্ছে। মূলত ২০১৯ সালে এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফুল্লা হত্যা মামলার ঘটনাটিই প্রাধান্য পাচ্ছে পুলিশের তদন্তে। সূত্রটির মতে, আসামিরা এরই মধ্যে পুলিশের অনেকটাই আয়ত্তে চলে এসেছে। মামলায় উল্লেখ করা আসামিদের বাইরেও সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজন পুলিশের নজরে রয়েছে। গুলি করার জন্য বাইরে থেকেও কাউকে আনা হয়েছিল কি না, তাও তদন্ত করছে পুলিশ।

এদিকে নাটঘর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন এরশাদুলের ভাই ও হত্যা মামলার বাদী মো. আক্তারুজ্জামান এবং এরশাদুলের স্ত্রী ইসরাত জাহান সেতু। গত সোমবার তাঁদের দুজনের পক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তিনিই ভোটে দাঁড়াবেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অবশ্য এর আগে এরশাদুলের বাবা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে চাচাতো ভাই সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী ছিলেন এরশাদুল। বছরখানেক আগে ওই মামলার মীমাংসার বিষয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে এরশাদুলের একটি অলিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু এরশাদুল চুক্তিমতো কাজ করছিলেন না অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। 
সম্প্রতি ওই মামলার চার্জশিট হয়ে যাওয়া এবং একাধিক বৃদ্ধ আসামি জেলে যাওয়ায় সেই ক্ষোভ প্রকট আকার ধারণ করে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিপক্ষের মুরব্বিরা এরশাদুলের কাছে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর পাননি। এ অবস্থা থেকেই মূলত এরশাদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই ধারণ করা একটি ভিডিওতে মামলার বাদী আক্তারুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, আবু নাসেরের ছেলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একজনের প্রশ্নের জবাবে আক্তারুজ্জামান ওই কথা বলেন। সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ২ নম্বর আসামি হলেন নান্দুর গ্রামের আবু নাসের এবং ১০ নম্বর আসামি আবু নাসেরের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম।   

নবীনগর উপজেলার নন্দুরা গ্রামের বাসিন্দা এবং নাটঘর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেমের ছেলে মো. এরশাদুল হক (৩৫) ও তাঁর সহযোগী বাদল সরকারকে (২৩) গত শুক্রবার রাতে উপজেলার কুড়িঘর বাজার এলাকায় গুলি করে খুন করা হয়। ঘটনার পরপরই একজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় এরশাদুলের ভাই মো. আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে পরের দিন রাতে ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামিদের মধ্যে দুজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নবীনগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা এখনো অভিযানে আছি। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। আসামিরা বারবার তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন বলে সমস্যা হচ্ছে।’