ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শুধু ধনী-গরিব নয়, পৃথিবী এখন টিকা পাওয়া ও না পাওয়ায় বিভক্ত

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২১  

ধনী ও গরিব, পৃথিবীকে মোটাদাগে এই দুই ভাগে এত দিন বিভক্ত করা হতো। তবে কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিভাজন এখন আরও একটু টেনে নেওয়া যায়, সেটা হলো টিকা পাওয়া ও টিকা না পাওয়া। বিষয়টি হচ্ছে, উন্নত দেশের প্রায় অর্ধেক লোক যেখানে দুই ডোজ কোভিড টিকা পেয়ে গেছেন, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশের মাত্র ১ শতাংশের মতো মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন।

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার তথ্যানুসারে, ১৭ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বেও ২৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। কিন্তু সেই তালিকায় নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অবস্থান নিচের সারিতে।

আরও কিছু তথ্য দিলে টিকা বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হবে। ১৭ জুলাই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দুই ডোজ টকা পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির ৬৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়ে গেছেন। অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন আরও ৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। এরপর আছে যথাক্রমে চিলি ও উরুগুয়ে। এই দেশ দুটির ৬১ ও ৫৯ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। বাকি উন্নত বা উচ্চ আয়ের দেশগুলোর অবস্থাও কাছাকাছি। অন্যদিকে ঘানা ও মোজাম্বিকের মতো দেশের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশের মতো মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

 

উন্নত দেশগুলো যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টিকা মজুত করে রেখেছে, সেই খবর সবাই জানে। অথচ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশই টিকা পাচ্ছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এখন কোভিডের নতুন সংক্রমণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই দেশগুলোতে টিকাদানের হার অত্যন্ত কম। ফলে তাদের অর্থনীতিও বিপর্যয়ের মুখে। বাংলাদেশেও টিকাদানের গতি অত্যন্ত কম বলে কিছুদিন পরপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেও সরকার খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রণোদনা দিতে না পারায় মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। তাতে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বাস্তবতা হলো, যেসব দেশের অন্তত অর্ধেক মানুষ টিকা পেয়েছেন, সেই দেশগুলো এখন অর্থনীতির সব দরজা খুলে দিতে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মানুষের হাতে প্রণোদনার টাকা জমা পড়ে আছে। এখন অর্থনীতি খুলতে শুরু করায় সেখানকার মানুষেরা বাজারে ভিড় করতে শুরু করেছেন। ফলে এই দেশ দুটিতে মূল্যস্ফীতির হার গত মাসে অনেকটাই বেড়েছে। এর আগে এমন খবরও এসেছে যে উন্নত দেশগুলোর মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনার টাকা জমা পড়ে আছে। তাঁরা তখন খরচ করতে পারছিলেন না। এখন মোটামুটি সব খুলে যাওয়ায় তাঁরা হাত খুলে খরচ করতে শুরু করেছেন।

বিজ্ঞাপন

উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকার সরাসরি জনগণকে প্রণোদনা দিচ্ছে না বা দেওয়ার সামর্থ্য তারা অনেকেই রাখে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে বেশি দামে টিকা কিনছে। ফলে এরা সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

টিকা পাওয়া না পাওয়া

পৃথিবীতে সব বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের কৃতিস্বত্ব (পেটেন্ট) থকে। উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে এর প্রয়োজনও আছে। কিন্তু মহামারির মতো জরুরি সময়ে বিশ্ব মানবতার অস্তিত্বেও স্বার্থেই কৃতিস্বত্ব শিথিল করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এই বাস্তবতায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় টিকার জন্য ট্রিপসে শিথিল করার আবেদন করে। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সায় দিলেও অন্যান্য সদস্যদেশগুলো সায় দিচ্ছে না। এ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। চলতি মাসে এ নিয়ে কিছু একটা সিদ্ধান্ত হয়েও যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পেটেন্টের শর্ত শিথিল করা হলেই যে টিকা উৎপাদনে গতি আসবে, সে কথা বলার উপায় নেই। কারণ, মহামারি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে যত মানুষকে শিগগিরই টিকার আওতায় নিয়ে আসা দরকার, সেই পরিমাণ টিকা উৎপাদনের ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে নেই। বাংলাদেশের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও আফ্রিকার সিংহভাগ দেশেরই তা নেই। আর প্রযুক্তি হস্তান্তরে উন্নত দেশগুলোর একধরনের অনীহা তো আছেই।

টিকা কেন

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, টিকা না পাওয়া মানুষেরা করোনা ভাইরাসের মিউটেশন বা অভিযোজনের করখানা। এটাকে আমলে নিয়ে বলা যায়, যত শিগগিরই বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা যবে, ততই মঙ্গল। এতে ভাইরাসের মারণক্ষমতা হ্রাস পাবে। তখন অর্থনীতিও খুলে যাবে। তা না হলে ভাইরাসের পাশাপাশি ক্ষুধাতেও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, টিকার ওপরই নির্ভর করছে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো।

সমতা

বিশ্বের সিংহভাগ মানুষের বসবাস নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। কিন্তু টিকা প্রাপ্তিতে তারাই সবচেয়ে পিছিয়ে। চিত্রটা এ রকম—১৭ জুলাই পর্যন্ত নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে টিকা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০ কোটির কিছু বেশি। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে তা ২৫০ কোটির কিছু বেশি এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে তা ৩৫০ কোটির কিছু বেশি।

কথা হচ্ছে, উচ্চ আয়র দেশগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে উন্নয়নশীল দেশগুলো রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু সব দেশ কমবেশি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে না পারলে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে না। তখন ভাইরাসের পাশাপাশি আরও অনেক মানুষ ক্ষুধায় মারা যাবে। সেই বাস্তবতা এড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক প্ল্যাটফর্মে আসার বিকল্প নেই। অন্তত মানবতার বিপর্যয় এড়াতে পেটেন্ট তুলে নিতে হবে। আর গরিব দেশগুলো যেন উন্নত দেশগুলোর সমান বা কম দামে টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।