ব্রেকিং:
নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই অবশেষে ন্যাটোর সদস্যপদ পেলো সুইডেন বাজারে নেই নতুন দামের সয়াবিন তেল, দাম বেড়েছে সবকিছুর ভারতে পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৮ কার্গো জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৩ চলছে কর্মযজ্ঞ, অক্টোবরে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন রাষ্ট্রপতি গার্ডেন থিয়েটার কুমিল্লার একক নাট্য প্রদর্শনী ১০ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ ইঞ্জিন বিকল, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ রোজায় কমলো অফিসের সময়সূচি গাড়ি তৈরি করবে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ: শিল্পমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত বাংলাদেশ ও সৌদি আরব
  • মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

সিনহা হত্যার এক বছর: ‘প্রদীপের’ নিচেই ছিল অন্ধকার

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১  

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। দীর্ঘ সময় ওই থানায় কর্মরত থাকার সুযোগে সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নিজস্ব একটি পেটোয়া ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। ওই বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ধরে এনে দেখাতেন ক্রসফায়ারের ভয়। আদায় করতেন টাকা। আর কাজ না হলে দেওয়া হতো মামলা।

এখানেই নিভে যাননি প্রদীপ। তার আক্রোশ থেকে রেহাই পেতেন না ভুক্তভোগীর পরিবারের নারীরাও। করা হতো যৌন নির্যাতন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতারের পর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে এসব অপকর্মের তথ্য।

ভুক্তভোগীদের একজন টেকনাফ থানার নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা নূর বেগম। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের এক রাতে কয়েকজন পুলিশসহ আমার বাড়িতে আসেন প্রদীপ। এসে আমার ছেলে জিয়াউর রহমানের খোঁজ করেন। তখন আমি খোঁজার কারণ জানতে চাইলে হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন প্রদীপ। পরে আমি আর কিছু বলতে পারি না। একদিন পর দেখি আমি সদর হাসপাতালে। জানলাম আমাকে গ্রেফতার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ।

নূর বেগমের ছোট ছেলে প্রবাসী কামাল হোসেন বলেন, আমার বড় ভাইকে খুঁজতে বাসায় এসেছিল পুলিশ। তখন তিনি ব্যবসার কাজে গোপালগঞ্জে ছিলেন। ভাইকে না পেয়ে আমার মা ও দুই ভাবিকে তারা ধরে নিয়ে যান। নেয়ার পর দুই ভাবিকে অশ্লীল নানান ইঙ্গিত দেন প্রদীপ। এতে রাজি না হওয়ায় এসআই সঞ্জিতের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা ছয় লাখ টাকা ব্যবস্থা করে দেই। পরে দেখি আমার মা ও ভাবিকে ৩০ হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পরও ক্ষান্ত হননি প্রদীপ। বড় ভাইকে গোপালগঞ্জ থেকে ধরে টেকনাফে নিয়ে আসেন। এরপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করেন। এরপরও তাকে ক্রসফায়ার দেন।

জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা থাকলেও নারীদের কোনো দোষ ছিল না বলে দাবি করেছেন স্থানীয়দের অনেকে। তবে ওসি ঘুষ নিতেই ইচ্ছে করে মামলা সাজান বলে দাবি করে জিয়াউর রহমানের পরিবার।

এদিকে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রেও প্রদীপের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র এএসপি খায়রুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, টেকনাফ ছিল ওসি প্রদীপের অভয়ারণ্য। মূলত তার স্বেচ্ছাচারিতা, আইন অমান্য করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিনহা এবং তার সঙ্গীরা। এছাড়া প্রদীপ সরকারি অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ও ইয়াবা কেন্দ্রিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

আজ ৩১ জুলাই নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২০ সালের এ দিনে টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় একই বছরের ৫ আগস্ট বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান করে মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।এ মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আরো আটজনকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পায় র‌্যাব।

মামলার পরদিন ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে পুলিশের করা আরেক মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয় মামলার আরেক আসামি টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।

মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম। এর মধ্যে ১২ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ক্ষমা চান। তবে জবানবন্দি দেননি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

দীর্ঘ চার মাস তদন্ত শেষে ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এ মামলার একমাত্র পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব। এরপর ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনপূর্বক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত।

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ মামলার চার্জ গঠন করেন। এ সময় ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হলেও কঠোর লকডাউনের কারণে তা হয়নি।

আদালতে বাদীপক্ষের ১০ জন সাক্ষীর বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ এখনো দেওয়া হয়নি। তবে এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।

অভিযোগপত্রে ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, ভ্রমণকাহিনী-ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য ২০২০ সালের ৩ জুলাই দুই সহযোগীসহ কক্সবাজারে যান সিনহা। টেকনাফে কাজ করার সময় মানুষের মুখে প্রদীপের নানা নির্যাতন-নিপীড়নের কথা জানতে পারেন তিনি। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রদীপের কাছেও চলে যায়।

এর কয়েকদিন পর প্রদীপের সঙ্গে দেখা হয় সিনহার। সেই প্রথম দেখাতেই সিনহাকে হুমকি দেন প্রদীপ। একই সঙ্গে সিনহা সম্পর্কে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও জানান তিনি। এরপর থানায় সোর্সদের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে গণপিটুনি দেওয়ারও চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু পরবর্তীতে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রাত ৯টা ৩০ মিনিটে গুলির ঘটনাটি জেলার এসপিকে জানান পরিদর্শক লিয়াকত। তখনো জীবিত ছিলেন সিনহা। কিন্তু তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি লিয়াকত। এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের শনাক্তে এসপির আরো তৎপর হওয়া উচিত ছিল বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অন্য একটি অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ আয়ে কোটিপতি হন তার স্ত্রী চুমকি কারন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। সোমবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

দুদক জানায়, দুদকের তদন্তে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলার সত্যতা মিলেছে। দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জিত টাকা অন্যের কাছে হস্তান্তরের অভিযোগও আনা হয়েছে।