ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে হরিণ

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

১৯৮৫ সালে নিঝুম দ্বীপে দুই জোড়া হরিণ অবমুক্ত করা হয়। সেই সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে নিঝুম দ্বীপ সফরে গিয়ে একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার, যা পরবর্তীতে বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়ায়।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালীর হাতিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চল নিঝুম দ্বীপ। রহস্যময় এ নিঝুম দ্বীপ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বহিঃবিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদেরও ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ দ্বীপের সবুজ-শ্যামল মনোরম পরিবেশ। এখানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ।

১৯৮৫ সালে নিঝুম দ্বীপে দুই জোড়া হরিণ অবমুক্ত করা হয়। সেই সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে নিঝুম দ্বীপ সফরে গিয়ে একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার, যা পরবর্তীতে বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়ায়। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। কিন্তু এখন সে সবই এখন ইতিহাস। বন উজাড় হওয়ায় এ দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৮-১০ হাজারে নেমে এসেছে।

মূলত গাছ কেটে বসতি গড়ায় আবাসস্থল হারাচ্ছে হরিণ। এখানে রাত-বিরাতে শিকারীরা হরিণ শিকার করে পাচার করছে। এছাড়াও শিয়াল-কুকুরের আক্রমণে হরিণের প্রাণহানি ঘটছে অহরহ। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় নোনা পানি বনে ঢুকে হরিণের খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক সময় প্রাণ বাঁচাতে হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। আবার খাদ্য ও আবাস সংকটে হরিণ নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্য দ্বীপগুলোতে চলে যাচ্ছে।

নোয়াখালীর হাতিয়ার ৮১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত যে দ্বীপ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে মায়ের মতো আগলে রাখে, সে দ্বীপের সবুজ বেষ্টনী এখন অস্তিত্ব সংকটে। পঞ্চাশের দশকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা অপরূপ সৌন্দর্যের নিঝুম দ্বীপ এখন অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে। পুরো এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে বনের গাছ কাটার মহোৎসব। দ্বীপের গাছ ও হরিণ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কমছে পর্যটক। হরিণ না দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের।

নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মাটিতে কেওড়া গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও কৌশলে কেওড়া গাছের নিচে শ্বাসমূল কেটে ফেলে রাখা হয়েছে, যাতে করে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়। লবণাক্ততার কারণে নিঝুম দ্বীপে শুধু কেওড়া গাছ হয়। আর এ গাছের দাম খুবই কম। তাই গাছ বিক্রির দিকে কারো মনোযোগ নেই। সবার নজর গাছ কেটে সেখানে বসতি গড়ে তোলায়।

এক সময় যেখানে বন বিভাগের মাধ্যমে সাড়ে ১২ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বাগান করা হয়েছিল, সেটি কমতে কমতে সাড়ে তিন হাজার একরে নেমে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে চিত্রা হরিণের খাবার কেওড়াগাছের পাতা। বনের গাছ কাটতে কাটতে কাটতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে হরিণের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

উপকূলীয় বন বিভাগ জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম চৌধুরী জানান, বন বিভাগের জমি দখল করে নিঝুম দ্বীপে পাঁচ হাজার পরিবারের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বন বিভাগের জমির ওপর অবৈধভাবে বসবাস করছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।

তিনি আরো জানান, সেখানে বন বিভাগের নিজস্ব জনবল অত্যন্ত কম। স্বল্প জনবল নিয়ে আমাদের লোকজন বেশ কয়েকবার বন বিভাগের জমি ফিরে পেতে উচ্ছেদে বের হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয়রা উল্টো একজোট হয়ে তাদেরকে আক্রমণ করতে আসে।

নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, নিঝুম দ্বীপে সীমানা প্রাচীর না থাকা, খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ হাজার হরিণ থেকে কমে ৮-১০ হাজারে নেমে এসেছে। অনেক সময় হরিণ পাচার হয়। তাছাড়া প্রতিটি ছোট বা মাঝারি হরিণের মূল্য ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলে টাকার লোভে অনেক বাসিন্দা হরিণ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। হরিণ কমে যাওয়ায় পর্যটকও কমে গেছে।

উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, মানুষ বন উজাড় করছে। এতে হরিণ বিচরণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে হরিণ পার্শ্ববর্তী বনে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগের বিট অফিসারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া আছে।