ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

একনজরে নবনিযুক্ত আইজিপির জীবনী

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২০  

ড. বেনজীর আহমেদ

ড. বেনজীর আহমেদ

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ- আইজিপি) নিয়োগ পেয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে বুধবার তাকে ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমান মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। 

বুধবার রাতে ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার ডিসি মো. মাসুদুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সরাসরি পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন।
 
চাকরিজীবন:
একজন দক্ষ, পেশাদার, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক পুলিশ অফিসার বেনজীর আহমেদ তার বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে র‍্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ও ডিআইজি (ফিন্যান্স এন্ড বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। 

ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে তিনি প্রথম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্ট্রাকচারাল রিফর্ম শুরু করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বর্তমান পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট (পিআইও) তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে। পিআইও ইউনিট সৃষ্টির জন্য পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। ফলে পুলিশের সামগ্রিক কাজে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক কার্যক্রমে গতিশীলতার সূচনা হয়। প্রকারান্তরে যা পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তিনি ২০১০-১৫ মেয়াদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ডিএমপিতে ব্যাপক স্ট্রাকচারাল রিফর্ম শুরু করেন। 

তিনি ডিএমপির প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সূচনা ও সম্পন্ন করেন। তারমধ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার সিস্টেম, রেশন স্টোর সফটওয়ার সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার, সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম উল্লেখযোগ্য। 

এ সময়ে ডিএমপির অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। মিরপুর পিওএম এর সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স এর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, রাজারবাগের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ, আধুনিক মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড ও ৮টি নতুন থানা স্থাপন অন্যতম। তিনিই প্রথম সরকারি কোনো অফিসে মিডিয়া সেন্টার স্থাপনের নজির স্থাপন করেন। 

চাকরি জীবনে জনগণের সেবা:
জনগণের সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি আরো সহজতর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে থানার সংখ্যা, জনবল ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের তদারকি বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ডিএমপিতে ৪টি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ৫টি যুগ্ম কমিশনার, ৭টি ডিসি পদসহ ৮টি থানার জনবলের পদ সৃজন করেন। 

সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা:
ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত বিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন এবং ঢাকা শহর তথা দেশকে এক মারাত্মক বিপর্যয় থেকে মুক্ত করেন।

এছাড়া তিনি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের রাজনৈতিক অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমা সন্ত্রাস অত্যন্ত সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দমন করেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বহুসংখ্যক ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমণ তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দমন করেন। 

তিনি নগরবাসীর জন্য ফরমালিন মুক্ত খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভেজালবিরোধী এক ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। এ সম্পর্কে তিনি জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা করেন। 

পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে নানামুখী উদ্যোগ:
পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। তার এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য ছিলো সম্মানিত নাগরিকদের অধিকতর সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জনগণকে আরো পুলিশি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তিনি প্রথম মহানগরীতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।

এছাড়া জনগণের  সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি চালু করেন ডিএমপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ডিএমপির অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল।

নাগরিকরা ডিএমপির উল্লেখিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পরামর্শ, বিভিন্ন সেবা গ্রহণের পদ্ধতি ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের করণীয় সম্পর্কে। যা আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক সম্মানিত নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের মধ্যে সেতুবন্ধন ও ইমেজ বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

র‍্যাবের মহাপরিচালক:
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি র‍্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। র‍্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দৃঢ়তার সঙ্গে  দায়িত্বপালন করে তিনি সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করেন। যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু বছরের আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। 

২০১৬ সালে হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনিই প্রথম মিডিয়াতে কৌশলী ও সাহসী বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান। 

তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মিডিয়া তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে। যা পরবর্তী সময়ে অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে তিনি কার্যকর ও যুগোপযোগী ভূমিকা রাখেন। ফলে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। 

তার নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযানে র‍্যাবের অর্জন আকাশচুম্বী। র‍্যাবের  মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। 

সাম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশ-বিদেশে সাঁড়া জাগানো ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে র‍্যাব। যার নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বেনজীর আহমেদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে র‍্যাবের টেকনোলোজিক্যাল ক্যাপাসিটি তৈরিতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে র‍্যাবের ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের আধুনিক মিডিয়া সেন্টার তার হাত ধরেই স্থাপিত হয়েছে। 

তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম যিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন্স এর অধীন মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সেকশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি কসোভো মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষা জীবনী:
বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এলএলবি ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তার জ্ঞানস্পৃহা প্রবল। তিনি সমসাময়িক বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকেন। লেখাপড়ার প্রতি তার ঐকান্তিক আকর্ষণের কারণেই তিনি সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পেশাগত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে তিনি রেক্টর’স মেডেল প্রাপ্তির কৃতিত্ব অর্জন করেন। এছাড়া চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ  অবদানের জন্য রেকর্ড সংখ্যক সর্বোচ্চ ছয়বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-এ ভূষিত হয়েছেন। এই দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এর তিনবার সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন।

তিনি ১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক।